৫ আগস্ট বিয়ে হলেও সেই সময়ে আহত দাবি করে তিনি হন ‘জুলাইযোদ্ধা’


৫ আগস্ট বিয়ে হলেও সেই সময়ে আহত দাবি করে তিনি হন ‘জুলাইযোদ্ধা’

ফেনীর সোনাগাজীর কাঠমিস্ত্রি এনায়েত উল্যাহ বাপ্পী (২৬) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ না নিয়েও ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয় নিয়ে নানা সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি দপ্তরে প্রভাব খাটানো থেকে শুরু করে চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডেও এই পরিচয় ব্যবহার করছেন তিনি।

তথ্য মতে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাপ্পী ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে তিন সাংবাদিকসহ ১০৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে শুনানির দিন অর্থাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। বাপ্পী সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব সুজাপুর গ্রামের আনোয়ার আলী সারেং বাড়ির আহসান উল্যার ছেলে।

২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ফেনী শহরের ইসলামপুর সড়কে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলার সময় পথচারী হিসেবে গুলিবিদ্ধ হন বাপ্পী। স্থানীয় দৈনিক ফেনীসময় ও তাঁর নিজ ফেসবুক আইডিতে সে সময় ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর এক ছাত্রনেতার সহায়তায় ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে আহত হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করান তিনি। পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের দাবি করে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হন। গেজেট নম্বর ৪২৫, তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।

১৮ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাপ্পী একাধিকবার পরস্পরবিরোধী তথ্য দেন। তিনি দাবি করেন, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মহিপালে গুলির স্প্লিন্টারে আহত হন এবং ১০ দিন পর ঢাকায় চিকিৎসা নেন। তবে কোনো নথি বা প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অথচ তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন তাঁর গায়ে হলুদ ছিল এবং পরদিন ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সুজাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বেলু জানান, এক সময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন বাপ্পী, এখন লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর ছোট ভাই হৃদয় স্থানীয় ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের মিছিলও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, “৪ আগস্ট মহিপালে আহত দাবি করে অনেকে আগে থেকেই আসামির তালিকা প্রকাশ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি।”

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার অভিযোগ করেন, ফেনীতে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীর কিছু লোক বিএনপির নাম ব্যবহার করে মামলা বাণিজ্যে নেমেছে। আমরা সবসময় এর প্রতিবাদ করছি।”

সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলনের পর বাপ্পী নিজেকে আহত দাবি করে এক ছাত্রনেতার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হন। এ সময় তিনি ছবি ও আঘাতের চিহ্ন দেখালেও সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপ্পী বলেন, “৪ আগস্ট গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। ৫ তারিখ সাধারণভাবে বিয়ে হয়েছে। আহত হওয়ার পর স্ত্রীর সেফটি-পিন দিয়ে শরীর থেকে বুলেট বের করেছি। এখনও শরীরে স্প্লিন্টার আছে।” তবে তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার দাবি করলেও কোনো হাসপাতালের নাম জানাতে পারেননি। মামলার প্রসঙ্গে বলেন, সাংবাদিকদের নাম উঠে আসায় মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যাচাই শেষে আবার মামলা করবেন।

ফেনীর বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম জানান, “আন্দোলনের সময়কার সিভিল সার্জন হয়তো শরীরের আঘাত দেখে তাঁকে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। বিষয়টি আমি জানি না।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×