অতিরিক্ত সংস্কারে রাষ্ট্র দুর্বল হতে পারে: আসিফ নজরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০২:০৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
দেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া না করার পরামর্শ দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তাঁর মতে, পরিবর্তনের নামে মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হলে রাষ্ট্র কাঠামোই দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ই-পারিবারিক আদালত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সংস্কারের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “অতিরিক্ত সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল করা যাবে না।” উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যারা অ্যাথলেট আছে তাদের যদি আপনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টা ট্রেনিং করান, তাহলে সে উসাইন বোল্ট হয়ে যাবে, নাকি মারা যাবে? অবশ্যই মারা যাবে। কাজেই আমাদেরকে বুঝতে হবে, অতিরিক্ত সংস্কার যেটা আমি নিতে পারি না, সেরকম সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোকে দুর্বল করে ফেলি কিনা সেটাও আপনাদের চিন্তা করতে হবে।”
সংস্কার নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারণা জনমনে তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশের সংস্কার নিয়ে কয়েক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে। অনেকে দেখি বলে ‘কোথায় সংস্কার, দৃশ্যমান হচ্ছে না’। প্রতিদিন আইসিটির বিচার টিভিতে দেখায় তখনও বলে বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, সংস্কার মানে হচ্ছে সংবিধান পরিবর্তন করা। আমাদের সমস্ত চিন্তা হচ্ছে সংবিধান পরিবর্তন হয়নি, তার মানে সংস্কার হয়নি।”
ই-পারিবারিক আদালত নিয়ে আসিফ নজরুল জানান, এই ব্যবস্থায় মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নথি ব্যবস্থাপনা, শুনানি ও রায়- সবই অনলাইনে সম্পন্ন হবে। তাঁর ভাষায়, “শুধু মামলা করা না। নথি ব্যবস্থাপনা শুনানি ও রায় সবকিছুই অনলাইনে হয়ে যাবে। আমরা এটাকে পেপারলেস কোর্ট বলতে পারি। এতে ভোগান্তি কমবে, সময় বাঁচবে, দুর্নীতি ও খরচ কমবে- এটা নিয়ে আমাদের কারও কোনো সন্দেহ নেই। আমাদর প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও ও বাসার নিচে দুটি বড় অফিস আছে। উনার সবচেয়ে বড় অফিস হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ।”
অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আদালত ব্যবস্থার নানান দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আদালত প্রাঙ্গণে আসাটা আমাদের জন্য এক্সসাইটিং কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটা আজাবের মতো। এখানকার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কখনোই মক্কেল ফ্রেন্ডলি ছিল না। যদি সার্ভার ডাউনের মতো কুচক্রের মধ্যে না পড়ি তাহলে সত্যিকার অর্থেই ই-পারিবারিক আদালত মানুষের উপকারে আসবে।”
উকিলদের প্রতি অনেকের আস্থার সংকট রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর বাধায় সমাজে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ব্যাহত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বৈরী একটা সমাজ যদি পরিবর্তন করতে চাইও সমাজকে যারা চালান তারা তো আসলে ততো সহজে পরিবর্তন চাচ্ছেন না। পদে-পদে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবর্তন কেবল সিস্টেমের নয়, মনস্তত্ত্বেও তো হতে হবে।”
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “আজকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ই-পারিবারিক আদালতের কার্যক্রম চালু হলো। এর ফলে সময়, শ্রম ও মামলার জট নিরসন হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টারা ঢাকার বিভিন্ন ই-পারিবারিক আদালত পরিদর্শন করেন।
উদ্বোধনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মো. সাব্বির ফয়েজ, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলাম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ইকবাল হোসেন এবং ডিএমপি প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছানসহ আরও অনেকে।