ভূমিকম্প: অপরাশেন থিয়েটারে মা, জানেন না ছেলে মারা গেছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীতে ভূমিকম্পের ভয়াবহতার প্রতিচ্ছবি এখন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক কক্ষে—বিছানায় নিথর পড়ে আছে মেডিকেল শিক্ষার্থী রাফির মরদেহ, আর পাশের অপারেশন থিয়েটারে তার মা নুসরাতের চলছে অস্ত্রোপচার। শরীরজুড়ে ব্যথা নিয়ে বারবার ছেলের খোঁজ করছেন তিনি। অবুঝ মায়ের প্রশ্ন—“রাফি কেমন আছে?” অথচ তিনি এখনো জানেন না, তার প্রিয় সন্তান আর কখনোই পৃথিবীর আলো দেখবে না।
রাফির বাড়ি বগুড়ায়। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। বাবা দিনাজপুরে চাকরি করেন। হলে থাকার সুযোগ পেয়েও ঢাকায় মা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী।
তার সহপাঠী অপু জানান, শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে মায়ের সঙ্গে মাংস কিনতে বংশালের কসাইটুলির নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাফি। ঠিক তখনই শুরু হয় ভূমিকম্প। তীব্র দুলুনিতে দোকানের ভবনের রেলিং ধসে পড়ে মা-ছেলের ওপর।
চারপাশের মানুষ ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনেন। চিকিৎসকেরা সেখানে জানিয়ে দেন—রাফি আর বেঁচে নেই। পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ধসের আঘাতে তার মাথা ও মুখমণ্ডল মারাত্মকভাবে থেঁতলে গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাফির মা নুসরাতকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চিকিৎসা চলছে। তিনি গুরুতর আহত হলেও পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয়। তবে প্রচণ্ড ট্রমায় আছেন বলে জানিয়েছেন অপু। এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে হাসপাতালে এসে ভেঙে পড়েছেন রাফির একমাত্র বোন।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বহু জায়গায় তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়াসহ ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে নরসিংদীর মাধবদীকে কেন্দ্র করে এই ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৫.৭, যা মধ্যম মাত্রার হিসেবে বিবেচিত।
বংশাল থানার ডিউটি অফিসার জানান, কসাইটুলির একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন রাফি। নিহত অন্য দুজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনজনের মরদেহই রাখা হয়েছে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
লালবাগ বিভাগের সহকারী কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, ভবনের অংশবিশেষ ভেঙে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান, আর আরেকজনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত্যু হয়।