আগে একজন পুলিশ যে সাহস দেখাত, এখন তিনজন মিলে তা পারছে না: জিএমপি কমিশনার
- গাজীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:৪২ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২৫
গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের সাহস ও সক্ষমতা নিয়ে মুখ খুলেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান। তাঁর মতে, আগের মতো সাহস ও দৃঢ়তা এখন আর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, “পুলিশ এখন ভয় এবং ট্রমার মধ্যে রয়েছে। আগে একজন পুলিশ সদস্য যে সাহস নিয়ে দায়িত্ব পালন করত, এখন তিনজন মিলেও সেই সাহস দেখাতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট কী ঘটেছে, আপনারা সবাই জানেন। পুলিশের ভুল-ত্রুটি ছিল, এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সত্য হচ্ছে—আমাদের সদস্যরা এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে আবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত গ্রেপ্তারও করছি। কিন্তু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।”
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জিএমপি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সিসিটিভি ফুটেজের প্রসঙ্গ টেনে কমিশনার বলেন, “আপনারা নিজেরাই দেখেছেন—একজনকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে, আরেকজন মাথায় কার্টন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আশপাশের কেউ চিৎকার করেনি, সাহায্য চায়নি। এমন ভয়াবহ ঘটনায় মানুষের এমন প্রতিক্রিয়া কীভাবে সম্ভব?”
তবে পুলিশের ব্যর্থতা পুরোপুরি এড়ানো যায় না বলেও স্বীকার করেন তিনি। “পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকলে এবং প্রতিকার না করলে, সেটা অবশ্যই দায়িত্বে অবহেলা। তবে অবহেলা আর সীমাবদ্ধতাকে এক করে দেখা ঠিক নয়,” বলেন কমিশনার।
তিনি আরও জানান, “চান্দনা চৌরাস্তার প্রতিদিনের চাপ প্রায় চার লাখ মানুষের। কিন্তু সেখানে আমাদের মাত্র দুইটি পেট্রোল টিম মোতায়েন করা থাকে। এটা যথেষ্ট কি না, সেটি আপনারা বিবেচনা করুন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা সংঘবদ্ধ ছিল। এক সাংবাদিক কেবল ছবি তুলেছিলেন—তাতেই তাঁকে প্রাণ দিতে হলো। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।”
ঘটনার পর শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন নাজমুল করিম খান। তাঁর ভাষায়, “৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন তারা অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।”
এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যারা একসময় এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত, তারা এখন ক্ষমতার বাইরে থাকায় পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। গাজীপুরে তারা বরাবরই শক্তিশালী ছিল। তাই নজরদারি আমাদের জন্য বাড়তি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যে মনোযোগ দেওয়া দরকার, তা বিঘ্নিত হচ্ছে।”