মৃত মোবারক বাড়ি ফিরলেন ৩৩ বছর পর
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৪:১৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি নিখোঁজ, পরিবার যাকে মৃত ভেবে মৃত্যুসনদ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছিল, সেই মোবারক হোসেন হঠাৎই ফিরে এসে দক্ষিণ কোলাপাড়ায় সৃষ্টি করলেন বিস্ময় আর আনন্দের বন্যা। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার এই গ্রামে ৩৩ বছর পর তাকে ফিরে পাওয়ায় হতবাক স্বজনরা।
দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের আলী আহমদের বড় ছেলে মোবারক হোসেন বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী। তার দুটি সংসার- প্রথম স্ত্রীর পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। দীর্ঘ অনুপস্থিতির মাঝে ময়মনসিংহে তৃতীয় বিয়েও করেছিলেন তিনি, যদিও সেই ঘরে কোনো সন্তান নেই।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৯২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর একদিন মোবারক বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজি, অর্থ ব্যয়- কিছুই তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কোনো তথ্য না পাওয়ায় সম্পত্তি ও কাগজপত্রের ঝামেলা মেটাতে বাধ্য হয়ে মৃত্যুসনদ তৈরি করেন পরিবারের সদস্যরা।
তবে কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় এক এনজিও কর্মীর মাধ্যমে নতুন করে খোঁজ মেলে তার। ওই কর্মী আগে পরশুরাম এলাকায় চাকরি করতেন এবং মোবারকের পরিবারকে চিনতেন। সেখানে মোবারকের সঙ্গে দেখা হলে তিনি পরিচয় নিশ্চিত করতে পরশুরাম কলেজ রোডের ব্যবসায়ী আবু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবারও নাম, ঠিকানা ও অতীতের তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হয় নিখোঁজ মোবারকই ওই ব্যক্তি। এরপর পরিবারের সদস্যরা ময়মনসিংহে গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
মোবারকের বড় মেয়ে মঞ্জু আক্তার বলেন, “বাবা নিখোঁজ হওয়ার দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘ওসি বাহার ভাই বদলি হচ্ছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।’ এরপর আর বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আজ এত বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।”
পরিবার জানায়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ মোবারক নানা রোগে আক্রান্ত। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বড় ছেলে জামাল উদ্দিন বলেন, “বাবাকে খুঁজতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। ধারণা ছিল বাবা বেঁচে নেই। এখন বাবাকে ফিরে পেয়েছি, এটা আল্লাহর রহমত। তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়, চিকিৎসা চলছে। জায়গা-সম্পদের ঝামেলা মেটাতে পৌরসভা থেকে বাবার মৃত্যু সনদও তৈরি করেছিলাম। বাবা বেঁচে আছেন এটা ভাবতেই এখন অবাক লাগছে।”
মোবারকের ফেরায় গ্রামে ভিড় জমিয়েছে শত শত মানুষ।
দক্ষিণ কোলাপাড়ার বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সী নুর ইসলাম বলেন, “আমাদের বয়স প্রায় কাছাকাছি। একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমরা জানতাম তিনি মারা গেছেন। তাকে ফিরে পেয়ে পুরনো সব স্মৃতি মনে পড়ছে। জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও তিনি পরিবারের কাছে ফিরেছেন, এটাই বড় সৌভাগ্য।”