১০ মাস পর সেন্টমার্টিন যাচ্ছে পর্যটকবাহী জাহাজ
- কক্সবাজার প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৬:০৮ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ বিরতির পর আবার সরব হতে চলেছে সেন্টমার্টিনগামী সমুদ্রপথ। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে প্রবাল দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ১০ মাস পর এই রুটে সাতটি জাহাজ যাত্রার অপেক্ষায় আছে।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি; এই দুই মাস নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে সাতটি জাহাজ চলবে। কোন দিনে কতটি জাহাজ ছাড়বে তা নির্ভর করবে যাত্রীর সংখ্যার ওপর। প্রস্তুত থাকা জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, বার আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন এবং আটলান্টিক ক্রুজ।
তিনি বলেন, সাতটি জাহাজের অনুমোদন এখনও পুরোপুরি শেষ না হলেও খুব দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। “১ ডিসেম্বর থেকে চলাচলের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ।”
সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ৯ মাস সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ছিল। ১ নভেম্বর দ্বীপটি খুলে দেওয়া হলেও তৎক্ষণাৎ জাহাজ চালু করা যায়নি। কারণ, সরকারি শর্ত অনুসারে নভেম্বরে দ্বীপে রাতযাপনের অনুমতি ছিল না। ফলে যাত্রীদের দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে হতো।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, নুনিয়ারছড়া থেকে দ্বীপে পৌঁছতে সময় লাগে ৭ থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। যাওয়া-আসা মিলিয়ে সমুদ্রযাত্রা দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টায়। জোয়ার-ভাটার কারণে সেন্টমার্টিনে জাহাজ মাত্র এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারে। এত দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে মাত্র এক ঘণ্টা ঘোরার সুযোগ থাকায় যাত্রীরা আগ্রহ দেখাননি। তাই নভেম্বরে জাহাজ চলাচল শুরু সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতযাপনের সুযোগ থাকায় এবার জাহাজ চলাচল শুরু করতে প্রস্তুত সবাই।
পর্যটকরাও একই মত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “সেন্টমার্টিনে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা অসম্ভব। দ্বীপে আসা-যাওয়ায় লেগে যায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা। নিশ্চয়ই এই আসা-যাওয়ার জন্যে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে চাইবে না। রাত্রিযাপনের সুযোগ না থাকলে পর্যটক বিমুখ হবে সেন্টমার্টিন।”
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আট বর্গকিলোমিটারের প্রবালসমৃদ্ধ এই দ্বীপে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ছিল। নতুন নীতিমালা অনুসারে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি; এই তিন মাস ভ্রমণের সুযোগ মিলবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন, তবে মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতযাপনের অনুমতি থাকবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলতে পারবে না। সব পর্যটককে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইন টিকিট কিনতে হবে এবং প্রতিটি টিকিটে যুক্ত থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকরা দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাস সব পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে ভ্রমণসূচি ও দৈনিক পর্যটকসংখ্যা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ থাকবে।
দ্বীপে থাকাকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ আয়োজন, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা নিষিদ্ধ। সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন নিষেধাজ্ঞার আওতায়। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহনও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, মিনিপ্যাক সাবান-শ্যাম্পু, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল নেওয়া নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাই পর্যটকদের নিজের পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।