পুলিশের গাফিলতিতে তিনদিন বন্দী থাকা সাত বছরের শিশু অবশেষে মুক্ত
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১২:৫২ এম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামে পুলিশের গাফিলতিতে তিনদিন ধরে আটক থাকা সাত বছরের এক শিশু অবশেষে স্বজনদের কাছে ফেরত গেছে। সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। শিশু ও তার মা শুক্রবার নগরের ষোলশহর এলাকা থেকে একটি অপহরণ মামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন।
বাংলাদেশের শিশু আইন অনুযায়ী, নয় বছরের নিচের কোনো শিশুকে কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রেপ্তার বা আটক রাখা যায় না। এমনকি বয়স্কদের সঙ্গে মামলা দায়ের করলেও শিশুর ওপর তা প্রযোজ্য নয়। বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর রোববার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাসানুল ইসলাম শিশুটিকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। অসুস্থ বড় ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান মা আনোয়ারা বেগম। হাসপাতাল থেকে চার বছরের শিশু রামিম নিখোঁজ হয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে আনোয়ারা বেগম সাত মাস পরে শুক্রবার পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয় সাত বছরের শিশু ও তার মাকে। অভিযোগ, হাসপাতালের বারান্দা থেকে তারা রামিমকে খেলার কথা বলে নিয়ে গিয়েছিলেন। মামলার দিনই পাঁচলাইশ থানার এসআই এনামুল হক শিশুটি ও তার মাকে ষোলশহর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন।
শিশুটিকে আদালতে পাঠানো হলেও এজলাসে হাজির করা হয়নি। অবকাশকালীন কার্যক্রমের কারণে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে শিশুটিকে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রোববার আদালতে শিশুটির জামিন আবেদন করা হয় এবং আদালত তা মঞ্জুর করে তাকে মুক্তি দেন।
গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ইমরান খান বলেন, ‘আদালতের আদেশ পাওয়ার পর শিশুটিকে একজন সমাজকর্মীর তত্ত্বাবধানে তার অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
শিশুটির বাবা, যিনি বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘পুলিশ কোনো তদন্ত, সাক্ষ্য ও প্রমাণ ছাড়া আমার শিশু সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে। আবার গ্রেপ্তারও করেছে। আমার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও তার মা এখনও কারাগারে। আমার সাড়ে তিন বছর বয়সী আরেকটি শিশু রয়েছে। সে এখন তার খালার কাছে রয়েছে। যারা বিনাকারণে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনী ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ জানান, ‘বিষয়টি যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’