এবি ব্যাংকে সংকট নেই, সাত মাসে আমানত বেড়েছে ৮,৪০০ কোটি টাকা: এমডি
- ফরিদ শ্রাবণ
- প্রকাশঃ ০৭:০২ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৫
দেশের তালিকাভুক্ত প্রথম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংক পিএলসি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাংকটি সাময়িকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং ব্যাংকের স্থিতিশীলতা সর্বদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।
বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যাংকিং খাতে ২৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সৈয়দ মিজানুর রহমান। এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি ব্যাংকটির নানা অগ্রগতি এবং সাফল্য নিশ্চিত করেছেন। ব্যাংকের আমানত, হিসাবধারীর সংখ্যা, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও খেলাপি ঋণ আদায়সহ গুরুত্বপূর্ণ সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকাওয়াচ টুয়েন্টিফোরের বিজনেস এডিটর ফরিদ উদ্দিন শ্রাবনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ মিজানুর রহমান ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ঢাকাওয়াচ: এবি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: পুরো ব্যাংকখাতই চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো সাত মাস আগের তুলনায় এখন অবস্থা অনেক ভালো। এবি ব্যাংকও সংকটে পড়েছিল, কিন্তু এখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এবি ব্যাংক তার পণ্য ও সেবার গুণমানের বিষয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ। ব্যাংকে একদল মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নতুন উদ্ভাবনী পণ্য এবং সেবা দিতে সক্ষম। ব্যাংকে অনুপ্রাণিত এবং উদ্যোমী কর্মকর্তারা রয়েছেন, যারা নতুন ব্যবসা অর্জন করতে সক্ষম। সর্বোপরি ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ একটি ভাল কর্পোরেট সুশাসন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমাদের শক্তিশালী মূলধন ও লিকুইডিটি’র পর্যাপ্ততা আছে যা গ্রাহক পর্যায়ে আমাদের ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি সাসটেইনিবিলিটি’র বিষয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। গ্রাহকের চাহিদামাফিক অর্থ পরিশোধ করতে কখনোই ব্যর্থ হয়নি এবি ব্যাংক। গ্রাহকেরদের জন্য ট্রেড অপারেশন অটোমেশন করা, কর্পোরেট ব্যাংকিং-এ নতুন নতুন সেবার সংযোজন করা, ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন নিরাপদ ও নির্ভুল সেবার নিশ্চয়তার বিভিন্ন ধরনের সেবা চালু রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরশীল আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তরিত, এখানে গ্রীন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আমাদের ব্যাংকের গ্রাহকরা এবি ব্যাংকের অ্যাপ দিয়ে দেশজুড়ে টাকা লেনদেন করতে পারেন। ইতোমধ্যেই এবি ব্যাংকে ইসলামিক ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম সেবা রয়েছে।
ঢাকওয়াচ: তিনটি ব্যাংকের সম্পদ যাচাই (একিউআর) নিয়ে কী বলবেন?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট তিনটি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) করছে। এই নিরীক্ষা শুধু এবি ব্যাংকের জন্য নয়। এর আগে চারটি ব্যাংকের কাজ শেষ হয়েছে, এখন তিনটি ব্যাংকের হচ্ছে এবং পরে আরও আটটি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা হবে। এটি মূলত আইএমএফের শর্তের অংশ। আমাদের প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি যাচাই করতেই এই নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ এবি ব্যাংক নিয়মিত তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এখানে ব্যাংক একীভূত করা হবে এমন কিছুই না।
ঢাকাওয়াচ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস রয়েছে। বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে। অনেক পরিকল্পনা। একটি ভালো ব্যাংক তৈরি করতে যা যা পরিকল্পনা দরকার সব ধরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাংকিং সেবাকে ‘গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড’-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান, শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এবি ব্যাংক একসময় একটি ব্র্যান্ড ব্যাংক ছিল, আমরা সেই অবস্থান পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- নতুন পণ্য ও সেবা চালু করে আমানত বাড়ানো, সাব-ব্রাঞ্চ ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট সম্প্রসারণ করা। তাছাড়া করপোরেট ঋণ বিতরণে আপাতত বিরতি, পরিবর্তে কৃষি, এসএমই ও নিরাপদ খাতকে অগ্রাধিকার, উদ্ভাবনী ব্যাংকিংসেবা চালু করা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করা।
ঢাকাওয়াচ: এবি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্জন কী মনে করেন?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: গত সাত মাসে আমাদের অর্জন নতুন আমানত সংগ্রহ প্রায় আট ৮ হাজার ৪শ কোটি টাকা। নতুন হিসাব খোলা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি। এছাড়া সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছে ১৬শ কোটি টাকার বেশি। সিএসআর প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরায় ২৬ হাজার মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য ব্যাংকের সুনাম ধরে রাখা এবং গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান।
ঢাকাওয়াচ: খেলাপী ঋণ আদায়ে কোন আইনী জটিলতা আছে কি না?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: খেলাপী ঋণ আদায়ে বড় বাধা রাজনীতি। এছাড়া দেশের আইন ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে খেলাপী ঋণ আদায় করা সম্ভব না। এটা সিম্মিলিত প্রয়াস ,আমরা যতই চেষ্টা করিনা কেন আমরা একটি মামলা করলে গ্রাহক আরেকটি মামলা করে, ফলে নিষ্পত্তি হতে বিলম্ব হয়। আমরা যদি ব্যাংকের জন্য স্পেশাল ১০ টি কোর্ট করতে পারি এবং কুইকলি রেজুলেশন পেয়ে যাই তাহলে অনেক খানি উন্নত হবে।
ঢাকাওয়াচ: এসএমই নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা জানতে চাই...
সৈয়দ মিজানুর রহমান: কর্পোরেট লোন থেকে আমাদের যে রিকভারি গুলো হবে তার পুরোটাই এসএমই তে ঋণ দিবো। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়,রাজনৈতিক সরকার আসলে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে ছোট বড় সব ইনভেস্টমেন্ট হবে। আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে গেলে কেউ কষ্ট করে ব্যাংকে আসা লাগবেনা, আমাদের অ্যাপ দিয়ে লেনদেন সহ সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।
ঢাকাওয়াচ: এবি ব্যাংকের মার্জারের প্রয়োজন নাই বলতে পারেন কি না?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: মার্জার হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক থেকে এবি ব্যাংক অনেক শক্তিশালী। এখন পর্যন্ত আমাদের কোন এলসি পেমেন্ট ফেইলড হয়নি , আমরা বিদেশি যেকোন ব্যাংকের এলসি কমিটমেন্ট মেনটেইন করতে পারছি, বড় ধরনের এলসি করতে পারছি। এবছর সরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০০ মিলিয়ন এলসি ওপেন করেছি, সুতরাং আমরা অন্য পাঁচটি ব্যাংক থেকে অবশ্যই ভালো ।