ফের যুদ্ধে জড়াচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান?


ফের যুদ্ধে জড়াচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান?

পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ৯ শিশু ও এক নারীর মৃত্যুতে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। মঙ্গলবারের এ হামলার পর কাবুল ঘোষণা দিয়েছে—সময় মতো ইসলামাবাদকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

হামলার বিষয়ে পাকিস্তান তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করে আসছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগান ভূখণ্ড থেকে জঙ্গিরা পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের বাহিনী।

গত মাসেও দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় বহু হতাহত হয়, যা ২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অভিযোগ-প্রতিআরোপ

পাকিস্তানের দাবি, আফগানিস্তানে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে এবং সেখান থেকেই হামলাকারীরা পাঠানো হয়। চলতি মাসেই ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ১২ জন—এক দশক পর রাজধানীতে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এটি প্রথম বড় আকারের হামলা। এর আগের দিন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের একটি সামরিক স্কুলে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় তিনজন নিহত হন।

সোমবার পেশোয়ারে আধাসামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরে তিন আত্মঘাতী হামলাকারী প্রবেশ করে ও গুলি চালায়, এতে কমপক্ষে তিনজন সদস্য নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

অন্যদিকে, আফগান তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানি জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, “কোনও দেশের বিরুদ্ধে আফগান ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয় না কাবুল।”

গত মাসের উত্তেজনা

ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়া তাদের সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। গত অক্টোবরে পাকিস্তান কাবুলে বিমান হামলা চালায় টিটিপি প্রধানকে লক্ষ্য করে, যদিও তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।

এর জবাবে ১১ অক্টোবর রাতে আফগান তালেবান সীমান্তের ২ হাজার ৬০০ কিমি এলাকায় পাকিস্তানি চৌকিতে হামলা চালায়। পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। ইসলামাবাদের দাবি, ওই সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত হয়; আর তালেবান বলছে, পাকিস্তানি হামলায় তাদের ৯ সদস্য প্রাণ হারায়।

পরে অক্টোবরের শেষদিকে দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে লিখিত নিশ্চয়তা না দেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা হয়নি। তালেবানের ভাষ্য, পাকিস্তানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

পাকিস্তানি তালেবান কে?

২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিভিন্ন পশতু জঙ্গিগোষ্ঠীকে একত্রিত করে টিটিপি গঠিত হয়। আফগান তালেবানের অনুসারী হলেও এই গোষ্ঠী আরও উগ্রপন্থী এবং আল কায়েদা মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত বলে ধারণা করা হয়।

বছরের পর বছর বাজার, মসজিদ, পুলিশ স্টেশন, বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে টিটিপি। সোয়াত উপত্যকা দখলের সময় এই গোষ্ঠীই স্কুলছাত্রী মালালা ইউসুফজাইকে গুলি করেছিল।

যদিও পাকিস্তান টিটিপির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালিয়েছে, তবুও সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ হামলার পেছনে এই সংগঠনকেই দায়ী করছে ইসলামাবাদ।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পরিস্থিতি

২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান প্রথমে তা স্বাগত জানায়। কিন্তু পরে দেখে, তালেবানের আনুগত্য তাদের দিকে নয়। পাকিস্তানের দাবি—টিটিপির শীর্ষ নেতারা এখন আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন, এমনকি বালুচ বিদ্রোহীরাও সেখানে নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে।

আফগান উত্তেজনায় কেন ভারতকে টেনে আনছে পাকিস্তান?

পাকিস্তান অভিযোগ করছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে সমন্বয় করে টিটিপি ও বালুচ বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে ভারত। তবে নয়াদিল্লি এসব অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করেছে।

সূত্র: রয়টার্স

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×