মুদি দোকানি রনির অর্থ-অস্ত্র সহায়তায় খুন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:১৪ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২৫
এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোচিত জুটি ছিলেন ইমন ও মামুন। তবে গত কয়েক বছর ধরে তাদের সম্পর্কে দেখা দেয় গভীর দ্বন্দ্ব, যা শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত পরিণতিতে গড়ায়। সেই শত্রুতার জেরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন পরিকল্পনা করেন মামুনকে হত্যা করার, আর সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয় রাজধানীর পুরান ঢাকায়।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মামুন হত্যায় জড়িত দুই শ্যুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক, রবিন, ইউসুফ, রুবেল এবং শামীম।
তিনি বলেন, গত সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথে দুজন অস্ত্রধারী গুলি ছুড়লে গুরুতর আহত হন তারিক সাইফ মামুন (৫৫)। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্ব হত্যাকান্ডের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রভাব বিস্তার নিয়েই ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রনি ফারুকের সহায়তায় একাধিকবার মামুনকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে মামলার হাজিরার দিন ১০ নভেম্বরকে বেছে নেয় হত্যার তারিখ হিসেবে। মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন রনি, এক সময়ের মুদি দোকানি, বর্তমানে কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি দুই লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে এবং অস্ত্র সরবরাহ করে হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান।
ডিবি প্রধান আরও জানান, ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় রনি তার বাসায় রবিনকে ডেকে পাঠান। পরদিন সকাল ৯টার দিকে রনি ফোনে রবিনকে জজ কোর্ট এলাকায় যেতে বলেন। সকাল ১০টার দিকে রবিন তার বন্ধু শামীমের ড্রাইভিংয়ে সেখানে পৌঁছে যায়।
অন্যদিকে রনির নির্দেশে ফারুক, সুমন কামালসহ আরও কয়েকজন জজ কোর্ট এলাকায় যায়। প্রথমে শুটিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হলে সুমন ও রনির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রনি সুমনের কাছ থেকে দুটি পিস্তল নিয়ে ফারুক ও রবিনের হাতে তুলে দেন। কামালকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মামুনকে অনুসরণ করে অবস্থান জানাতে।
মামুনের সংকেত পাওয়ার পর ফারুক ও রবিন উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যায় এবং রনির নির্দেশে অস্ত্রগুলো রুবেলের কাছে জমা দেয়। পরে অস্ত্র ও গুলি রুবেলের বন্ধু ইউসুফের বাসায় রাখা হয়।
হত্যার পর রনি নগদ ২ লাখ টাকা রুবেলের মাধ্যমে শ্যুটার ফারুক ও রবিনকে ১ লাখ টাকা করে প্রদান করেন। পরবর্তীতে রনি নির্দেশ দেন তাদের সিলেট পাঠানোর জন্য, যাতে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালাতে পারে।
গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকা থেকে ফারুক, রবিন, রুবেল ও শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হত্যার পর রনি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নেয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে না পারে। রনি বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।