লালমোহনে ‘অর্ধশিক্ষিত’ চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেন বেপরোয়া
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:১৯ এম, ২৬ মে ২০২৪
লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন উপজেলার বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও এবার শুরু থেকেই সহিংস হয়ে গেছে ভোটের মাঠ। এর নেপথ্যে রয়েছেন এইচএসসি পাস এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে জখম করেই ক্ষ্যান্ত হন না, পাল্টাপাল্টি মিছিলের ছবি তোলায় পেশাগত গোয়েন্দা দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ সদস্যকেও পিটিয়েছেন। এতে পুরো উপজেলা নির্বাচনের পরিস্থিতি থমথমে অবস্থায় রয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষে শালিক প্রতীকের প্রার্থী আকতার হোসেনের জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং টানা এক যুগেরও বেশি সময় কালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে ধরে রাখলেও তার পেশা রাজনীতি নয়। হলফনামা অনুযায়ী তার পেশা ব্যবসা। এই পেশা থেকে বছরে ৮ লাখ টাকা আয়সহ তিনি বার্ষিক মোট আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আকতার হোসেনের বার্ষিক আয়ের মধ্যে কৃষিখাত থেকে ৫০ হাজার, ব্যবসা থেকে ৮ লাখ টাকা, ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ২০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ, টিভি-ফ্রিজ-ফ্যান, চেয়ার-খাট-ফার্নিচার। যার মূল্য উল্লেখ করেননি তিনি। এই প্রার্থীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- কৃষি জমি ১১.৫৬ একর, অকৃষি জমি ১ একর, দালান ১টি, গাড়ি ১টি। এছাড়া তার স্ত্রীর রয়েছে ৩০ ভরি স্বর্ণ। হলফনামায় তিনি ১টি দালান এবং বার্ষিক ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় দেখালেও লালমোহন সরকারি কলেজের উল্টো পাশে তার কয়েক কোটি টাকা মূল্যের আলিশান বাড়ি রয়েছে। এছাড়া কালমা ইউনিয়নে তার পৈত্রিক বাড়ি, ভোলা সদর এবং ঢাকায় একাধিক বাড়ি/দালান রয়েছে বলে জানা গেছে। বার্ষিক ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় দিয়ে তিনি কীভাবে কোটি কোটি টাকার বাড়ি করেছেন সেসব নিয়েও উপজেলায় ভোটার ও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচনী হলফনামায় একাধিক তথ্য গোপনসহ লালমোহন উপজেলা নির্বাচনে শুরু থেকেই সন্ত্রাসের পথ বেছে নেওয়ায় তার ওপর সাধারণ ভোটাররা অসন্তুষ্ট বলে সরেজমিনে তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিক ভোটার বলেছেন, কালমা ইউনিয়ন লালমোহন সদরের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি চেয়ারম্যান থাকলেও ইউনিয়নের তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। এছাড়া তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও বেশি নয়। তিনি লালমোহন উপজেলা পরিষদে প্রথমবার নির্বাচন করতে এসেই যে মিথ্যা এবং সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন তাতে ভরাডুবি ছাড়া কোনো গতি নেই। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, পুলিশ সদস্যের ওপরও তিনি হামলা চালিয়েছেন। এতে লালমোহন উপজেলার মানুষ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। এমন অর্ধশিক্ষিত ও সন্ত্রাসের প্রার্থীকে মানুষ উপজেলা চেয়ারম্যান বানানোর মতো ভুল করবেন না।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে একাধিকবার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে আকতার হোসেনের সমর্থকরা। এরমধ্যে গত বুধবার (২২ মে) রাতে পৌর শহরে চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান টিটবের দোয়াত কলম প্রতীকের মিছিল বের করা হয়। সেসময় ওই মিছিলের পিছু পিছু মিছিল বের করে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেনের শালিক প্রতীকের সমর্থকরা। দুটি মিছিলের স্থিরচিত্র ধারণ করছিলেন ডিএসবি’র এসআই কেএম আবদুল হক। এসময় হঠাৎই শালিক প্রতীকের মিছিল থেকে কয়েকজন সমর্থক এসআই আবদুল হকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওই ঘটনায় পুলিশের ওই সদস্য বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই এজাহারে আকতার হোসেনের সমর্থকরা হামলা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর গত শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় কালমা ইউনিয়নের বালুরচর এলাকায় দোয়াত কলম প্রতীকের পোস্টার লাগাতে গেলে এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে আকতার হোসেনের সমর্থকরা। কুপিয়ে গুরুতর আহত করা ওই কর্মীর নাম রুহুল আমিন (৫৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচর এলাকার দানু মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। আকতার হোসেনের কর্মীদের দেশীয় অস্ত্রের কোপে হাতের আঙ্গুল প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রুহুল আমিনের। এছাড়াও তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই ঘটনার পর গুরুতর আহত রুহুল আমিনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহুল আমিনকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠান।
এ বিষয়ে জানতে শালিক প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেনের মুঠোফোনে সেসময় কল দেওয়া হয়। তবে একবার ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দিলেও পরে তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাচনে আকতার হোসেনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এমনকি পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ প্রশাসন এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবরে ভোলা সদর থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জেলা প্রতিনিধিরা লালমোহন থানার ওসিকে ফোন দিলেও অদৃশ্য কারণে তিনি এ বিষয়ে কথাও বলতে চাননি। পরে হামলার শিকার এসআই আব্দুল হক মামলা করলে লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাহবুব উল আলম জানান, ‘মামলার একাধিক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ পুলিশের এমন অবস্থানে ভোটাররা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনের একাধিক প্রার্থী এমন প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।