বড় ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে লক্ষাধিক প্রাণহানির শঙ্কা, ঝুঁকিতে ৭০-৮০ শতাংশ ভবন


বড় ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে লক্ষাধিক প্রাণহানির শঙ্কা, ঝুঁকিতে ৭০-৮০ শতাংশ ভবন

চট্টগ্রামে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটলে নগরীর অধিকাংশ ভবন ভেঙে পড়তে পারে এবং প্রাণহানির সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। শহরটি তিনটি প্রধান টেকটনিক প্লেট- বার্মিজ-ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার (ইউরেশিয়ান)-এর সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া, নিয়মবিধি অমান্য করে গড়ে ওঠা অসংখ্য বহুতল ভবন নগরীর মাত্র ৬০ বর্গমাইলের এলাকা বিপজ্জনক করে তুলেছে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই অভূতপূর্ব ঝাঁকুনি নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের চারপাশে অবস্থিত সক্রিয় টেকটনিক প্লেটগুলো অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয়। চট্টগ্রামের ভূগর্ভেও একটি ছোট টেকটনিক প্লেট সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। প্লেটগুলোর চলাচলের কারণে ২০২১ সাল থেকে দেশে মোট ২১২ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এই সময়কালে নগরীতে অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কয়েক হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।

চুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের বহু ভবনের বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। এগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানিয়েছে, নগরীতে বর্তমানে ৪ লাখ ১ হাজার ৭২১টি বহুতল ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৪৮০টি ভবনের উচ্চতা ৬ থেকে ১০ তলা, আর ৪৮৪টি ভবন ১০ তলার বেশি। অনেক ভবন বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়নি। উপকূলীয় অবস্থানের কারণে নির্মাণসামগ্রী দ্রুত ক্ষয়প্রবণ, এবং সংকীর্ণ সড়ক দুর্ঘটনার সময় উদ্ধারকাজে বড় বাধা তৈরি করতে পারে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার এবং সাগরের নিকটে হওয়ায় নির্মাণসামগ্রীর কিউরিং প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ভবনগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।’

গত চার বছরে দেশে ৩৭টি ভূকম্পন হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প রাজধানী ও চট্টগ্রামে বাস্তব ঝুঁকি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে।

চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম বলেন, ‘যেসব ভবন রেট্রোফিটিং করে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। আর যেগুলো টেকনিক্যালি ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। উদ্ধারকারী বাহিনীর গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে সংকীর্ণ সড়কগুলো প্রশস্ত করতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত নিয়মিত মানুষকে সতর্ক করা।’

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান প্লেটের কারণে বড় ভূমিকম্পের উদাহরণ অতীতেও রয়েছে। ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। গত ১০৭ বছরে দেশের বেশিরভাগ ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৫.৫-এর মধ্যে ছিল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে এবং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×