গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল


গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতি চলছে গত জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। এরপর থেকে বড় কোন সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও যে কোন সময় ফের বেজে উঠতে পারে যুদ্ধের দামামা। এর মধ্যেই গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের একজন মুখপাত্র এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ইসরায়েলের হাতে অনেক উপায় রয়েছে।’

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, ‘বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য গাজা উপত্যকায় পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না বলে মঙ্গলবার একজন ইসরায়েলি মুখপাত্র বলেছেন। নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ওমর দোস্ত্রি স্থানীয় রেডিও ৯৪এফএম-কে বলেছেন, ‘হামাস যত বেশি দিন প্রত্যাখ্যান করতে থাকবে, ইসরায়েল তত বেশি সুবিধা পাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হামাসকে চাপ দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ রয়েছে। আমরা যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার জন্য সামরিকভাবেও প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং গাজার পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার সম্ভাবনাকেও আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’

এই মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইসরায়েল ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সমন্বয় করছে এবং যতটা সম্ভব জীবিত বন্দিদের ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে চায়।’

এদিকে নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনায় নামতে অস্বীকার করেছেন। এর পরিবর্তে তিনি চুক্তির প্রথম ধাপ বাড়াতে চান। আর তাই যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পরই গত রোববার (২ মার্চ) ইসরায়েলি সরকার গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

তবে হামাস এই ধরনের কোন শর্তের অধীনে অগ্রসর হতে অস্বীকার করেছে। বরং তারা জোর দিচ্ছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চলবে এবং অবিলম্বে দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনা শুরু করবে, যার মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সম্পূর্ণ বন্ধের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘ইসরায়েল এক সপ্তাহের মধ্যে গাজার বিরুদ্ধে বর্ধিত কৌশল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা, হত্যাকাণ্ড ও ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ অংশে বাস্তুচ্যুত করার মতো বিষয়ও রয়েছে।’

গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চালানো নিরলস এই আগ্রাসনে প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×