বিশ্বে প্রথমবার মানবদেহে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:০৩ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালে বিশ্বের প্রথমবারের মতো মানবদেহে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রতিস্থাপিত ফুসফুস ৯ দিন পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
এই ফুসফুসটি এমন এক ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়, যিনি ব্রেইন-ডেড ছিলেন। মানবদেহে পশু-পাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনকে জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন বলা হয়। এই বিষয়টির ওপর কাজ করছেন এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. জাস্টিন চ্যান, যিনি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে বলেন, “আমরা কয়েক জন ব্রেইন-ডেড রোগীর দেহে জেনেটিকভাবে মোডিফায়েড (জিএম) শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেছিলাম। তাদের মধ্যে একজনের দেহে এই ফুসফুস ১০ দিন কার্যকর ছিল।”
ডা. চ্যান জানান, “এই অপারেশনের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এসব ফুসফুসের স্বাধীনভাবে মানবদেহে টিকে থাকার সক্ষমতা নেই। আমাদের অপারেশন হয়তো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেনি, তবে এটি একটি দারুন এবং আশাব্যাঞ্জক কাজ ছিল।”
এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন, ফুসফুস প্রতিস্থাপন এবং শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফিশার। তিনি দ্য গার্ডিয়ানের কাছে বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবীজুড়ে যেসব রোগী হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ ও কিডনির অকার্যকারিতা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মাত্র ১০ শতাংশ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান এবং বেঁচে থাকতে পারেন। এর প্রধান কারণ, এসব প্রত্যঙ্গ খুবই দুর্লভ।”
ফিশার আরও বলেন, “জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশন এসব রোগীর জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এখনও এটি প্রাথমিক অবস্থা পার করছে, তবে ইতোমধ্যে এর অগ্রগতি ঘটেছে। এনওয়াইইউ হাসপাতালে সম্প্রতি শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের যে অপারেশনটি হয়েছে, সেটি জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বড় এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এই অপারেশন আমাদের জানান দিচ্ছে যে আমরা সঠিক পথে আছি এবং এ ব্যাপারে আমাদের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আরও বাড়াতে হবে।”
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে পশু-পাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। এই পরীক্ষাগুলোতে মূলত ব্রেইন-ডেড রোগী এবং গুরুতর অসুস্থ ও মরণাপন্ন রোগীদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
তবে এখন পর্যন্ত এসব প্রতিস্থাপন সফল হয়নি; প্রতিস্থাপনের পর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক মাসের মধ্যে নতুন অঙ্গকার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে অ্যান্ড্রু ফিশার বলেন, “একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বলতে পারি, এই প্রত্যঙ্গটি একদিকে যেমন অক্সিজেন সরবরাহ করে, তেমনি মানবদেহে রোগজীবাণুর প্রবেশও ঘটে এর মাধ্যমে। আবার প্রবেশ করা রোগজীবাণুকে প্রতিহত করার প্রাথমিক কাজটিও করে ফুসফুস। এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি প্রত্যঙ্গ।”
তিনি আরও বলেন, “ফলে অন্য কোনো প্রাণীর ফুসফুস স্থাপন করা হলে অনেক সময়েই মানবদেহ নতুন ফুসফুসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। এটা জেনোট্রান্সপ্ল্যানটেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান