গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণ, নিহত অন্তত ৬১


গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণ, নিহত অন্তত ৬১

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও অন্তত ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জন প্রাণ হারান মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে। একই দিনে অপুষ্টি ও অনাহারে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন শিশু। এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে চালানো ইসরায়েলি হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, নিহতদের মধ্যে ১৯ জনই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজার রাজধানী নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালানো হয়।

গাজা নগরী দখলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এটি গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর হওয়ায় সেখানে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল। ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিযানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “গাজা নগরীতে সেনা অভিযান ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। লাখো বেসামরিক মানুষ, যারা আগেই ক্লান্ত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, আবারও ঘর ছাড়তে বাধ্য হবেন। এতে পরিবারগুলো আরও গভীর বিপদে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মূলত ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্তের ফল, যা মানবিকতার পরিপন্থি।” গুতেরেস অভিযানের সমালোচনা করে এটিকে যুদ্ধের “একটি নতুন ও ভয়াবহ ধাপের সূচনা” বলে উল্লেখ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গাজা নগরী ছেড়ে উপকূলীয় এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন অনেকে। এ সময় শুজাইয়া, জায়তুন ও সাবরা এলাকায় চালানো হয় প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, কেবল জায়তুনের দক্ষিণাঞ্চলেই ১,৫০০-র বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, সেখানে কোনো ভবন অবশিষ্ট নেই।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা নগরীকে হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজা জুড়ে যোদ্ধা এবং তাদের অবকাঠামোর বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনজন যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সেনারা, যদিও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানায়, নিহতদের মধ্যে রয়েছে খানের ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া এক নারী ও তার শিশু, যাদের মৃত্যুর সময় তাঁরা একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে ছিলেন।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাতজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একজন শিশুকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। তারা বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষকে গুম করা কেবল বিস্ময়করই নয়, বরং এটি নির্যাতনের শামিল।”

তারা আরও বলেন, “খাবারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে লক্ষ্যভিত্তিক ও গণহারে মানুষ নিখোঁজ করার প্রক্রিয়া এখনই বন্ধ করতে হবে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার অপুষ্টি ও অনাহারে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে দুইজন শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধা-সংক্রান্ত কারণে মোট ৩১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২১ জন শিশু।

আল-জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে জানান, “অত্যন্ত করুণ দৃশ্য চোখে পড়ছে। পরিবারগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচণ্ড গরমে স্যুপ রান্নার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রায়ই খালি হাতে ফিরছে। অন্যরা আবার জীবন ঝুঁকিতে ফেলে খাবারের জন্য বিতরণকেন্দ্রে ছুটছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×