‘মোদি চোর, অমিত শাহ চোর, বিজেপি চোর’: বিধানসভায় মমতার হুঙ্কার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:২৫ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভারতের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া মন্তব্যে। রাজ্যের বিধানসভা অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “মোদি চোর, অমিত শাহ চোর, বিজেপি চোর।” তার এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সংঘাত আরও গভীর হয়েছে।
এই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য ঘোষিত নতুন অভিবাসন আইন। ১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও একটি পার্শ্ববর্তী দেশের সংখ্যালঘুরা যারা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে বসবাস করতে পারবেন। বিজেপির দাবি, এটি মানবিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “এই আইন কি সংসদে আলোচনা হয়েছে? স্থায়ী কমিটি বা সিলেক্ট কমিটিতে গিয়েছে? একতরফাভাবে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কিভাবে?” তার অভিযোগ, বিজেপি এই আইনকে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে কারচুপির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “ভোটে বিজেপি জিতবে না। এই আসনে থাকবে আমরা, থাকবে অন্যরা। বিজেপির কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।”
মমতার বক্তব্যের সময় বিজেপি বিধায়কেরা প্রতিবাদ শুরু করলে অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারা কাগজ ছুড়ে বক্তব্য বন্ধ করতে চাইলে, স্পিকার চার বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন।
মমতা আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি মূলত বাঙালির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই আচরণ সংসদীয় নয়, গণতান্ত্রিকও নয়। কিন্তু আমাকে তারা দমাতে পারবে না।”
বিজেপি পাল্টা স্লোগানে মমতাকেই “চোর” বলে আখ্যায়িত করলে, মুখ্যমন্ত্রী এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি মোদি ও অমিত শাহকে চোর বলেই আক্রমণ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বাকযুদ্ধ আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে আরও তীব্র হচ্ছে। বিজেপি উদ্বাস্তুদের স্বার্থে কথা বললেও, তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে ভোট-রাজনীতির কৌশল হিসেবে দেখছে। মমতার কঠোর ভাষা তার সমর্থকদের মধ্যে শক্তি জোগাচ্ছে বলেও বিশ্লেষণ করছেন অনেকে।
বিরোধীরা এই ধরনের ভাষাকে রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেও, তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিজেপির আগ্রাসী কৌশলের সামনে পাল্টা আক্রমণই উপযুক্ত জবাব।
নতুন অভিবাসন আইন এখন শুধুমাত্র জাতীয় ইস্যু নয়, বরং তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রাজ্য রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এই সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।