যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসা ফি বছরে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৪৪ এম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক প্রোক্লেমেশনে এইচ-১বি কর্মী ভিসার ফি বছরে ১ লাখ ডলার নির্ধারণ করেছেন। শুক্রবার সই করা এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত বড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের নাগরিকরা এ ভিসার সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার আইটি পেশাজীবীদের ওপরও সরাসরি প্রভাব পড়বে।
উচ্চ দক্ষ কর্মী নিয়োগে ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসায় এখন থেকে প্রতিটি বিদেশি কর্মীর জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বছরে ১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে। বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “সব বড় কোম্পানি এই পরিকল্পনায় রাজি আছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।” তার মতে, আগে প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি কর্মী এনে প্রশিক্ষণ দিত, এখন বাধ্য হয়ে দেশীয় তরুণদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দিতে হবে।
হোয়াইট হাউস স্টাফ সেক্রেটারি উইল শার্ফ জানান, নতুন প্রোক্লেমেশন নিশ্চিত করবে যে কেবলমাত্র অত্যন্ত দক্ষ এবং মার্কিন কর্মীদের দ্বারা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়—এমন বিদেশি কর্মীকেই আনা যাবে। তিনি অভিযোগ করেন, সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হওয়া ভিসাগুলোর একটি হলো এইচ-১বি।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, কিছু কোম্পানি এ ভিসা ব্যবহার করে স্থানীয় কর্মীদের মজুরি কমাচ্ছিল। নির্বাহী আদেশে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) খাতের কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২৫ লাখে দাঁড়ালেও এ সময় স্টেম খাতে সামগ্রিক কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ।
সমালোচকরা বলছেন, এত বিপুল ফি আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে বৈশ্বিক মেধা আকর্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম মেনলো ভেঞ্চার্সের পার্টনার ডিডি দাস সতর্ক করে বলেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।” বিশ্লেষকদের মতে, বড় কোম্পানিগুলো এ খরচ সামাল দিতে পারলেও ছোট আইটি প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপগুলো কঠিন সমস্যায় পড়বে, এমনকি তারা কিছু কাজ বিদেশে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারে।
ইমার্কেটারের বিশ্লেষক জেরেমি গোল্ডম্যান মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে সরকার বিপুল রাজস্ব পাবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এ নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে এবং চীনের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে দুর্বল অবস্থানে ফেলতে পারে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ভারতের অংশ ৭১ শতাংশ এবং চীনের ১১.৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কেবল অ্যামাজন ও এর ক্লাউড ইউনিট এডব্লিউএস পেয়েছে ১২ হাজারের বেশি অনুমোদন, মাইক্রোসফট ও মেটা পেয়েছে ৫ হাজারের বেশি করে।
নতুন ঘোষণার প্রভাব বাজারেও পড়েছে। আইটি সেবা নির্ভর কগনিজ্যান্টের শেয়ার ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইনফোসিস ও উইপ্রোর শেয়ারের দরও ২ থেকে ৫ শতাংশ নেমে গেছে।
আইনগত দিক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নীতিনির্দেশক অ্যারন রাইকলিন-মেলনিক বলেন, “কংগ্রেস সরকারকে কেবলমাত্র আবেদন প্রক্রিয়ার খরচ উদ্ধারের অনুমতি দিয়েছে, এর বাইরে অতিরিক্ত ফি চাপানো আইনসঙ্গত নয়।”
বর্তমানে প্রতি বছর ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হয়, সঙ্গে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য বাড়তি ২০ হাজার। লটারির মাধ্যমে ভিসা বণ্টন হয় এবং অনুমোদনের পর কোম্পানিগুলোকে কয়েক হাজার ডলার খরচ বহন করতে হয়। সাধারণত তিন থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ কার্যকর থাকে।
একই দিনে ট্রাম্প আরেকটি নির্বাহী আদেশে ‘গোল্ড কার্ড’ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এর আওতায় যে কেউ ১০ লাখ ডলার পরিশোধ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে পারবেন।