ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া বেআইনি: কলকাতা হাইকোর্ট
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৪৬ এম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কলকাতার হাইকোর্ট এক অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালি খাতুনকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও ঋতব্রত মিত্রের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন, সোনালি খাতুনসহ আরও পাঁচজন ভারতীয় নাগরিককে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
বর্তমানে সোনালি খাতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কারাগারে বন্দি আছেন। মানবাধিকার কর্মীরা এই রায়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। আদালত দিল্লি পুলিশের পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়ার তাড়াহুড়ো ও তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে।
বিচারপতিরা রায়ে উল্লেখ করেছেন, বিদেশি সন্দেহে আটক হলে আইনের দায়িত্ব অনুযায়ী পরিচয় যাচাইয়ের নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। তবে এই পরিবারকে মাত্র দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, যা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। হাইকোর্টের এই রায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও একটি বড় জয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গত প্রায় চার মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্তকরণের বিশেষ অভিযান চলছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজ করতে যাওয়া অনেক বাংলাভাষী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে, যেখানে বৈধ ভারতীয় নাগরিককেও ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ দাবি করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
যে ছয়জনকে বাংলাদেশে ঠেলা হয়েছিল, তারা দুটি পরিবারের সদস্য। সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ এবং ছেলে সাবির শেখ বীরভূম জেলার পাইকর থানার বাসিন্দা। অন্য পরিবারটির সদস্যরা একই জেলার মুরারই থানার ধিতেরা গ্রাম থেকে এসেছেন—সুইটি বিবি, কুরবান শেখ (১৬) ও ইমাম শেখ (৬)। পশ্চিম দিল্লির পুলিশ তাদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে শনাক্ত করলেও বীরভূম জেলা পুলিশ জমির দলিলসহ প্রমাণ দাখিল করে নিশ্চিত করেছিল যে তারা ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু এই প্রমাণ দাখিলের আগে দিল্লি থেকে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, গ্রেপ্তারের সময় সোনালি খাতুন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আদালতে উপস্থাপন করার পর তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সোনালির স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি কারাগারের ডাক্তার নজর রাখছেন এবং প্রয়োজনে তাকে বাইরের হাসপাতালে নেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম ও পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে এটিকে শ্রমিকদের জন্য বড় স্বস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।