সেনা মোতায়েন নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মুখে ট্রাম্প


সেনা মোতায়েন নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মুখে ট্রাম্প

অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগের কাজে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অধিকার নিয়ে রাজ্য সরকারগুলোর আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিনয় ও ওরেগন রাজ্যে কেন্দ্রের সেনা মোতায়েন নিয়ে আদালতগুলোতে আইনি লড়াই চলার মধ্যেই ট্রাম্প প্রয়োজনে ‘ইন্সারেকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে শহরে সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “ইন্সারেকশন অ্যাক্ট থাকার একটি কারণ আছে। যদি আমাকে এটি প্রয়োগ করতে হয়, আমি তা করবই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি মানুষ খুন হতে থাকে এবং আদালত বা গভর্নররা আমাদের আটকে রাখে, তবে অবশ্যই আমি সেটা করব।”

চলমান আইনি বিতর্ক

প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন সামরিক মোতায়েন নিয়ে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে ইলিনয় রাজ্য সরকারের নতুন মামলার প্রেক্ষাপটে, মার্কিন জেলা বিচারক এপ্রিল পেরি ফেডারেল সরকারের জবাব দেওয়ার জন্য বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

ইলিনয়ের অ্যাটর্নি জেনারেল কোয়ামে রাউল এবং শিকাগো শহরের কর্মকর্তারা এই মামলা দায়ের করেছেন। রাউল ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এর আগে রবিবার রাতে ওরেগনের বৃহত্তম শহর পোর্টল্যান্ডে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফেডারেল বিচারক ক্যারিন ইমারগাট সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেন।

বিচারক ইমারগাট পার্শ্ববর্তী ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রায় ২০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্তটি আটকে দিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে, অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ ‘বিদ্রোহের ঝুঁকি তৈরি করেনি’ তবুও প্রশাসন কেন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে তার পূর্বের আদেশ উপেক্ষা করার জন্য তিরস্কার করেন।

ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎজকার ট্রাম্পের সর্বশেষ পরিকল্পনাকে- যার মধ্যে রাজ্যের ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনাকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা এবং টেক্সাস থেকে আরও ৪০০ সেনা মোতায়েন করা- ‘বেআইনি ও অসাংবিধানিক’ বলে নিন্দা করেছেন।

সেনা ব্যবহারের পক্ষে ট্রাম্পের যুক্তি

নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ও আইন প্রয়োগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যবহার প্রসারিত করার চেষ্টা করছেন।

তিনি ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোকে ‘সহিংসতা-পীড়িত ও আইনহীন’ হিসেবে তুলে ধরার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নিচ্ছেন।

গত সপ্তাহে সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ শত্রু হিসেবে নাগরিক গোলযোগের কথা উল্লেখ করেন এবং শহরগুলোকে ‘একটির পর একটি’ ঠিক করার অঙ্গীকার করেন।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের উচিত এই বিপজ্জনক শহরগুলোর কয়েকটিকে আমাদের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা।”

‘ইন্সারেকশন অ্যাক্ট’ কী?

মার্কিন আইন অনুসারে, ১৮০৭ সালের পুরানো আইন ‘ইন্সারেকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ না করা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন না।

তবে, ন্যাশনাল গার্ড কিছু ক্ষেত্রে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে সহায়তা করতে পারে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস ও ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করেছেন এবং আরও অন্তত আটটি বড় শহরে সেনা পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বরে একজন ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে অভিবাসন বিরোধী অভিযানের সময় লস অ্যাঞ্জেলেসে গার্ড সেনা মোতায়েন করে ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে, সামরিক বাহিনী ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে শহরগুলোতে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অভিবাসন এজেন্টদের সংখ্যা বাড়িয়েছে।

শিকাগোর দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি অভিবাসন কেন্দ্রের কাছে বিক্ষোভ চলাকালে গত শনিবার ফেডারেল এজেন্টরা এক নারীকে গুলি করে, যিনি বেঁচে যান এবং পরে তাকে ফেডারেল হেফাজতে নেওয়া হয়।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, এলাকা পর্যবেক্ষণকারী বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্টদের গাড়ি ‘১০টি গাড়ি দ্বারা ঘেরাও এবং ধাক্কা’ খাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে।

গত সপ্তাহে অন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায়, ফেডারেল এজেন্টরা একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অভিযান চালানোর সময় ‘ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার’ ব্যবহার করেছে- যা নজীরবিহীন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×