গুমের শিকার ৭ পরিবারের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলো বিএনপি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:২৬ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বংশালে গুম হওয়া সাত পরিবারের স্বাবলম্বিতার জন্য একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে দলটি। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ‘ফ্যাশন পার্ক’ নামের একটি অনলাইন শপ ও শোরুম।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়কে (বিএনপি ক্লাবের বিপরীতে) অবস্থিত শোরুমটির উদ্বোধন করেন গুমের শিকার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, গুম পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তবে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত হিরো তারাই ছিলেন। যারা গুম হয়েছেন, তাদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবেই, ইনশাআল্লাহ।
ইসহাক সরকার বলেন, আমাদের সহকর্মীরা ১২-১৩ বছর ধরে গুমের শিকার। আজও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এই শোরুম দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের পরিবার অন্তত ন্যূনতমভাবে চলতে পারে। আমরা বিএনপি ও বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাই সবাই যেন এখানে কেনাকাটা করেন। এতে পরিবারগুলো টিকে থাকতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন যারা গুমের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে জনগণের সামনে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে জনগণের সামনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন পরিবারগুলোঃ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের দীর্ঘ অপেক্ষা, বেদনা ও অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরেন।
মো. পারভেজ হোসেন: ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর শাহবাগ থেকে গুম হন। স্ত্রী ফারজানা আক্তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে বলেন, প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করি। সন্তানদের নিয়ে একা একা জীবন চালাতে হচ্ছে। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
সেলিম রেজা পিন্টু: সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, গুম হন ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর। বড় ভাই ইসলাম রেজা বলেন, এত বছর হয়ে গেল তবুও ভাইয়ের কোনো খবর নেই। প্রতিদিন মায়ের চোখে পানি দেখি। পরিবারের যন্ত্রণা এখনো শেষ হয়নি।
মো. মাহফুজুর রহমান সোহেল: বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি। তার মেয়ে সাদিকা সরকার শাফা আবেগভরা কণ্ঠে বলে, আমার বন্ধুদের বাবা-মা আছে, কিন্তু আমার বাবা নেই। আমি শুধু চাই, বাবাকে আবার ফিরে পেতে।
মো. চঞ্চল কাজী: বংশাল থানা ছাত্রদলের সদস্য, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর গুম হন। স্ত্রী রেশমা আক্তার বলেন, স্বামীর অনিশ্চিত ভাগ্যের কথা ভেবে প্রতিদিন ভয়ে আর শোকে দিন কাটে।
হাবিবুল বাসার জহির: বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। পরিবারের সদস্যরা জানান, সাদা পোশাকধারীদের হাতে একসঙ্গে চারজনকে তুলে নেওয়ার পর থেকে কোনো খোঁজ নেই।
মো. সম্রাট মোল্লা: সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবারের সদস্যরা বলেন, স্বাভাবিকভাবে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, আর ফেরেননি।
খালেদ হাসান সোহেল: সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। চকবাজার এলাকায় কারাগারের ফটকের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের ভাষায়, সেদিন থেকে ঘরে শুধু কান্না।
উপস্থিতি ও উদ্দেশ্যঃ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট মো. রাশেদ, আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান দিপু, সদস্যসচিব এমএ মান্নান হীরা, শামসুর রহমান রকিব, কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম, যুবদল নেতা রায়হান সেন্টু ও মো. পারভেজসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বংশাল ও সূত্রাপুর থানার গুম হওয়া পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং তাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করা।