শিক্ষা-অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করলে শিক্ষকেরা রাস্তায় থাকত না: রিজভী


শিক্ষা-অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করলে শিক্ষকেরা রাস্তায় থাকত না: রিজভী

দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা শিক্ষকদের পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব পালন করলে আজ শিক্ষকদের রাস্তায় অনশন করতে হতো না।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবিতে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে রিজভী বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় যদি জনগণের কথা ভেবে কাজ করতো, তাহলে এতদিন ধরে এই শিক্ষকেরা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে দাবি আদায়ে দিনের পর দিন অনশনে বসত না।”

তিনি উল্লেখ করেন, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের বেতনের উদাহরণ টেনে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকেরা অনেক টাকা বেতন পায়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন ধরনের লালফিতার দৌরাত্ম্য রয়েছে, এতে উপদেষ্টারা কি অসহায় বোধ করছেন, নাকি আপনারা তাদের ওপর নির্ভর করে কাজ করছেন, এটা মানুষ জানতে চায়।”

বিদ্যুৎ ক্রয় নিয়ে পূর্ববর্তী চুক্তির কথাও তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনেছিল। ইউনূসের সরকার সেই চুক্তি কিন্তু বাতিল করতে পারেনি। জনগণের পরিশ্রমের টাকা এখনো তাদেরকে দিতে হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদেরকে ভাড়া দিতে হয়।”

শিক্ষকদের দুরাবস্থা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে ফুটপাত-রাস্তায় গড়াগড়ি করছে। শিক্ষকদের জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা বের হয় না, কোনো নীতিমালা তৈরি হয় না।”

অর্থনীতিতে সরকারের নীতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “অর্থ উপদেষ্টা কেন জানি গরিব মানুষদের পক্ষে থাকেন না। অন্তর্বর্তী সরকার গরিব মানুষের জন্য হলেও, এই সরকার গরিব মানুষের দিকে তাকায় না। বরং গরিব মানুষের ওপর কীভাবে স্টিমরোলার চালানো যায়, আজকে আমি সেটির নমুনা দেখলাম।”

তিনি দাবি করেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের মাঝে শিক্ষকদের জন্য ব্যয় করতে সরকার অনিচ্ছুক। “কত হাজার হাজার কোটি টাকা তো লোপাট হয়ে গেছে, শতশত কোটি টাকা এখন কয়েকজনের বাড়িতে খোঁজ করলেই তো পাওয়া যায়। সরকারও তো কতদিকে কত কাজে টাকা দিচ্ছে। তাহলে শিক্ষকদের জন্য টাকা খরচ করতে অসুবিধা কোথায়,” প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সারের কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসে কর বৃদ্ধির সমালোচনাও করেন রিজভী। তাঁর ভাষ্য, “এই কর ধার্য করার কারণে সারের দাম বাড়বে। কৃষি উৎপাদন বিপন্ন হবে এবং অনেক খরচ হবে। কৃষকেরা আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার তো জনগণের সরকার নয়। এই সরকার তো গরিব মানুষের সরকার নয়। এ সরকার এমন একটি সরকার, যে মাথার মধ্যে তেল আছে, সেই মাথার মধ্যেই তেল ঢালে। এটা হতে পারে না। এভাবে চলতে পারে না।”

একই সঙ্গে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে এবং “সব রাজনৈতিক দল মনে করেছে এ সরকারের অধীনে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেই বিশ্বাস এখনো আছে ডক্টর ইউনূসের ওপরে।”

রিজভীর অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টার অন্য উপদেষ্টারা জনগণের স্বার্থে কাজ করছেন না। তাঁর ভাষায়, “আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) অন্য উপদেষ্টারা জনগণের স্বার্থে, জনগণের চিন্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন না। এটা কোনো কার্যকর সরকারের কাজ হতে পারে না।”

শেষে তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান এবং তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×