খালেদা জিয়ার হার্ট ও চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে: ডা. এফএম সিদ্দিকী
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৩৪ এম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবারও শারীরিক জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হার্ট এবং ফুসফুসে একযোগে সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ২৪ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
রোববার ২৩ নভেম্বর রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী। তিনি জানান, ‘গত কয়েক মাস ধরেই উনি খুব ঘন ঘন আক্রান্ত হচ্ছিলেন। আজকে আমরা যে কারণে এখানে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) ভর্তি করিয়েছি সেটা হচ্ছে উনার কতগুলো সমস্যা একসঙ্গে দেখা দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, উনার চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে।’
অধ্যাপক সিদ্দিকী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার পূর্বে থাকা হৃদরোগ পরিস্থিতিকে এই সংক্রমণ আরও জটিল করেছে। তার ভাষায়, ‘যেহেতু উনার হার্টের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। উনার হার্টে পারমানেন্ট পেসমেকার আছে এবং হার্টে ওনার স্ট্যান্ডিং করা হয়েছিল, রিং পরানো হয়েছিল তারপরেও উনার মাইট্রোস্টেনোসিস নামে একটা কন্ডিশন আছে সেজন্য চেস্টে হওয়াতে উনার একসঙ্গে হার্ট এবং ফুসফুস দুটোই এ্যাট এ টাইম আক্রান্ত হওয়াতে ওনার খুব রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস হচ্ছিল। সেজন্য এখানে আমরা খুব দ্রুত ওনাকে নিয়ে এসেছি।’
তিনি জানান, হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় জরুরি পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই চিকিৎসা পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। ‘হাসপাতালে আনার পর আমরা খুব তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত যে পরীক্ষাগুলো করা দরকার তা করেছি... উনাকে এন্টিবায়োটিক দিয়েছি, ওনাকে যেভাবে প্রাথমিক দ্রুত এবং জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার দরকার হয় সেটা দিয়েছি।’
খালেদা জিয়ার অবস্থার পরবর্তী ১২ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড তার অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তিনি কেবিনেই থাকছেন।
রোববার রাত ৮টার দিকে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে আছেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক, যেখানে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যুক্ত ছিলেন, এর মধ্যে লন্ডন থেকে ডা. জুবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞও ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী জানান, ‘মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাডামের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’
বিএনপির চিকিৎসা বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা বলতে চাই, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা ডেফিনেটলি সুচিকিৎসার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত কোনো বিষয় আমরা মনে করছি না।’
তিনি আরও জানান, আগামী ১২ ঘণ্টা পর মেডিকেল বোর্ড আবার বসবে এবং তখন প্রয়োজন হলে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হবে। পরিবারের সদস্যরাও নিরন্তর খোঁজ রাখছেন। ‘গতকাল ভোর থেকে তারেক রহমান ও উনার সহধর্মিনী জুবাইদা রহমান তাদের “আম্মু’র” ব্যাপারে সর্বাক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।’
দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।’
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে যান এবং সেখান থেকে ১১৭ দিন পর ৬ মে দেশে ফেরেন।