ঝালকাঠিতে আদালত চত্বরেই হত্যা মামলা সাক্ষীকে হাতুড়িপেটা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:২৬ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫
ঝালকাঠিতে একটি হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে আদালতের মূল ফটকের সামনেই হামলার শিকার হয়েছেন এক সাক্ষী। রবিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, মামলার আসামিরাই সাক্ষীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
আহত ওই ব্যক্তি হলেন আবদুল মন্নান মৃধা ওরফে চুন্নু (৫২), যিনি নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং কয়া গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার পরপরই ঝালকাঠির সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামানকে দ্রুত মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহেব হোসেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর কয়া গ্রামের একটি ইটভাটার সামনে দুর্বৃত্তদের হামলায় রুবেল গাজী (২২) নামে এক যুবক নিহত হন। নিহতের বাবা জসিম গাজী এ ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
রবিবারের শুনানিতে আবদুল মন্নান আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে অভিযুক্তদের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে আসামিরা প্রধান ফটকের সামনে তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আহত অবস্থায় তাঁর মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। আশপাশের বিচারপ্রার্থীরা ছুটে এসে রক্তাক্ত মন্নানকে দ্রুত এজলাসে নিয়ে যান। সেখানেই বিচারক তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
রুবেল হত্যা মামলার তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩ মে ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযুক্তরা হলেন অহিদুল ইসলাম মৃধা, মো. রফিক মৃধা, সোহেল মাঝি, সাইদুল ফকির, মো. সালাম ফকির, এনায়েতুর রহমান, কালাম খান, নাসির খান, মো. এরশাদ হাওলাদার, মো. রবিউল হাওলাদার, মো. বাবুল মৃধা ও মো. সোহরাব মৃধা।
আহত মন্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুবেল হত্যা মামলায় আসামিদের চিহ্নিত করে আজ আমি আদালতে সাক্ষী দিয়েছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত জখম করে।’
মামলার বাদী জসিম গাজী বলেন, ‘মামলার সাক্ষীকে হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে চান তাঁরা।’
জেলা পিপি মাহেব হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আবদুল মন্নান আদালতে সাক্ষী দিয়ে আসামিদের চিহ্নিত করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।’ তিনি জানান, আদালত থেকে ওসিকে দ্রুত মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ‘আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। এ ঘটনায় দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’