‘ছাত্রলীগ’ পরিচয়ে গ্রেপ্তার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, অংশ নিতে পারেনি পরীক্ষায়
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০১:০৭ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৫
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলার মধ্যেই কারাগারে বন্দি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসেন। কুমিল্লায় ‘ছাত্রলীগ’ পরিচয়ে গ্রেপ্তার এই স্কুলশিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক, ফলে অংশ নিতে পারেননি কোনো পরীক্ষায়। ইমরান নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) গভীর রাতে চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরানকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশের বরাত দিয়ে জানা যায়, এসআই আলমগীর হোসেন পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এতে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় ইমরানকে ৬ নম্বর আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং এজাহারে তাকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে দাবি করা হয়েছে, ঢালুয়া ইউনিয়নের মনতলী ব্রিজ এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী স্লোগান, ঝটিকা ও মশাল মিছিল করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ প্রথম আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে ইমরানসহ অন্যান্যদের নাম উঠে এসেছে বলে পুলিশের দাবি।
তবে এসব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেছে ইমরানের পরিবার। তার বাবা ইসহাক মিয়া জানান, তাদের পরিবার কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। রাত ৩টার দিকে আকস্মিকভাবে পুলিশ ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গেলেও কোনো সহায়তা মেলেনি, আদালতও জামিন দেননি। তার অভিযোগ, ‘কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার বলেন, ইমরান নিয়মিত ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য বিদ্যালয়ের কাছে নেই। তিনি ইমরানের মুক্তি দাবি করেছেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগে সক্রিয় থাকার কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ওসি এ কে ফজলুল হক জানান, ‘আমাদের কাছে ছেলেটির এমন কোনো ছবি বা ভিডিও নেই। তবে ওই দিন রাতে তাকে গ্রেপ্তারের আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যে ইমরানের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে, ইমরান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়েছে। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে যথাযথ নিয়ম মেনে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।’
পরিবারের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিটা তদন্তে প্রমাণ হবে।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে এলাকায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে চার্জশিটে নাম থাকবে না।