মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালে হাজির ১৩ সেনা কর্মকর্তা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:১৩ এম, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি আলোচিত মামলায় সেনাবাহিনীর ১৩ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। টানা ক্ষমতায় থাকার সময় টিএফআই ও জেআইসি সেলে বিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে এসব মামলা হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রবিবার ২৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে একে একে তাদের হাজতখানায় রাখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ট্রাইব্যুনাল ১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আজ শেখ হাসিনাসহ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি হওয়ার কথা। এদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ফেরত সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং পলাতক আসামিদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
যাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে তারা হলেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, অবসরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ছিল নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে অবস্থান নেন। দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
এর আগে ২০ নভেম্বর নির্ধারিত শুনানি প্রসিকিউশনের আবেদনে পিছিয়ে আজ ঠিক করা হয়। গত ২৬ অক্টোবর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ১ এই নির্দেশ দেন। ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১৩ কর্মকর্তাকে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করতে সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। র্যাবের টিএফআই সেলে আটক রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ মামলায় সেনাবাহিনীর ১০ কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এছাড়া জেআইসি বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে আরেক মামলায় ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখানেও আসামিদের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক। মামলাটিতে ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এ মামলায় তিনজন জেলহাজতে থাকলেও বাকিরা এখনো পলাতক।
চলমান এসব মামলার অগ্রগতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে, আর আদালত চত্বরে নজর এখন ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী আদেশের ওপর।