গাজায় একদিনে নিহত ৬৪, সহায়তা নিতে গিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু


গাজায় একদিনে নিহত ৬৪, সহায়তা নিতে গিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে একদিনে আরও ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে।

এছাড়া অনাহার ও অপুষ্টির কারণে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গাজা শহরে ইসরায়েলের অভিযান আরও তীব্র হওয়ায় প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতি বেড়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা নগরীতে আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে মহল্লা ও আবাসিক এলাকা। ফলে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

মঙ্গলবার গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চলের একটি জনবহুল বাজারে ইসরায়েলের চালানো হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন নারী। এ ঘটনায় আরও অনেকেই আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল সূত্র।

আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইসরায়েলি হামলার মুখে উত্তর গাজার আস-সাফতাওয়ি এলাকা থেকে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণাঞ্চলের ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ পাঠানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েল।

ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তায় নারী, পুরুষ ও শিশুরা লম্বা লাইনে হেঁটে যাচ্ছে। কারও হাতে ব্যাগ, কারও হাতে খাটিয়া বা কম্বল। কেউ ঠেলাগাড়িতে বহন করছে জিনিসপত্র, কেউ আবার শিশুদের হাত ধরে হাঁটছে।

প্যালেস্টাইনি সিভিল ডিফেন্সের হিসাব অনুযায়ী, গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা শহরের জায়তুন ও সাবরা এলাকায় এক হাজারেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।

গাজা শহরের বাসিন্দা ও লেখক সারা আওয়াদ বলেন, “ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে প্রতিদিন এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নিজের ঘরে থেকে বোমাবর্ষণের ঝুঁকি নেবে, নাকি আবারও উদ্বাস্তু হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সব সময় ভাবি, কেন আমাকে পালিয়ে গিয়ে তাঁবুতে থাকতে হবে, অথচ আমার ঘর তো এখানেই? প্রতিদিন দেখি পরিবারগুলো ঘর ছাড়ছে, অথচ তাদের যাওয়ার জায়গা নেই।”

আল জাজিরাকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ জন সহায়তা সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত জিএইচএফ গত মে মাসের শেষ দিকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে ২,১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ক্ষুধা মারাত্মক রূপ নিয়েছে, আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, এবং জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৩ জনে, যার মধ্যে ১১৭ জন শিশু।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×