৪৫ বছর পর আবার আফিম চাষের অনুমোদন ইরানে
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:০০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর ইরান সরকার দেশের অভ্যন্তরে আফিম উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
ইরানের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দপ্তর (এফডিএ) জানিয়েছে, ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে আফিম চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এফডিএ মুখপাত্র মোহাম্মদ হাশেমি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “মরফিন, কোডেইন, পেথিডিনসহ বেশ কয়েকটি জরুরি ওষুধের প্রধান কাঁচামাল আফিম। যদি আফিমের সরবরাহ না থাকে, তাহলে এই ওষুধগুলো উৎপাদন করা সম্ভব হবে না এবং আমাদের ওষুধ খাত সংকটে পড়বে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বৈধভাবে আফিম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ইরানে বছরে প্রায় ৫০০ টন আফিম প্রয়োজন হয়। এক সময় এসব আফিম মূলত প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে আসত। তবে ২০২১ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান সরকার আফগানিস্তানে আফিম চাষ নিষিদ্ধ করে।
যদিও এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, তারপরও আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে বছরে ৭৫০ টনের বেশি আফিম উৎপাদন হতো, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে ২০০ টনের ঘরে। এর প্রভাবে আফগান আফিমের দাম বেড়েছে এবং ইরান বৈধভাবে আমদানিও করতে পারছে না।
ইরানের ইসলামপন্থি সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, “পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের ওপর একের পর এক নিষেধজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফলে আমাদের ওষুধসহ অনেক পণ্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করতে হচ্ছে আমাদের। আফিম আমাদনিতে সমস্যা হওয়ার কারণেই এটি চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরানে সরকারি অনুমোদনে আফিম চাষ হতো। তবে বিপ্লবের পর তা নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির ড্রাগ কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টার্স (ডিসিএইচকিউ)-এর সাবেক মহাপরিচালক সাঈদ সেফাতিয়ান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি দুই দশক আগেই আফিম উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সেফাতিয়ান বলেন, “ইরানের মাটি এবং আবহাওয়া আফিম চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই যদি সত্যিই দেশে আফিমের চাষ শুরু হয়, তাহলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বৈধভাবে বিদেশেও আফিম রপ্তানি করা সম্ভব হবে।”
ইরানে মাদকাসক্তি একটি বড় সামাজিক সমস্যা। জাতিসংঘ ২০১০ সালে ইরানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম ভোক্তা দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সর্বশেষ সরকারিভাবে ২০১৫ সালের একটি পরিসংখ্যানে জানানো হয়, দেশে অন্তত ৪৪ লাখ মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে মাদক ব্যবহার করে।
তবে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ৯০ শতাংশ আফিম জব্দ করে ইরানি পুলিশ। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, মাদক চোরাচালানের অভিযোগে একই বছর প্রায় ৫০০ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস