জাতিসংঘে জরুরি আপিল: শেখ হাসিনার ন্যায়বিচার নিয়ে ‘শঙ্কা’


জাতিসংঘে জরুরি আপিল: শেখ হাসিনার ন্যায়বিচার নিয়ে ‘শঙ্কা’
স্টিভেন পাওলস এবং তাতিয়ান ইটওয়েল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও দুইজনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর।

এই পরিস্থিতিতে লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের দুই আইনজীবী স্টিভেন পাওলস এবং তাতিয়ান ইটওয়েল সম্প্রতি শেখ হাসিনার পক্ষে জাতিসংঘে জরুরি আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনটিতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার যথার্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এই আবেদন জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূতের কাছে পেশ করা হয়েছে। ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের ওয়েবসাইটে সোমবার, ১০ নভেম্বর এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

দুই ব্রিটিশ আইনজীবী আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, “বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে এই বিচারকাজ চলছে।” আবেদনটিতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচারের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি ও তার দল, আওয়ামী লীগ, পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন ধীরে ধীরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বড় গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এর তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।”

আবেদনে আরও বলা হয়, “এরপর শেখ হাসিনা ও আরও দুইজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের সময় তৎকালীন সরকারের প্রতিক্রিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যেহেতু শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, তাই তার বিচার অনুপস্থিতিতেই চলছে। রায় শিগগিরই ঘোষিত হওয়ার কথা, এবং এতে শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।”

দুই ব্রিটিশ আইনজীবীর জরুরি আবেদনে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনার সরকার ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ আছে, ঠিক তেমনই দলটির সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অপরাধে কোনও মামলা হবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

আবেদনে শেখ হাসিনার পক্ষে দুই আইনজীবী তিনটি প্রধান উদ্বেগ তুলে ধরেছেন।

প্রথমত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের অভাব। আইসিসিপিআর সনদের অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মামলায় বিচারক ও প্রসিকিউটরের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা গুরুতর পক্ষপাতের প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ আছে, প্রধান প্রসিকিউটর নিজেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, অনুপস্থিতিতে বিচার এবং প্রতিরক্ষার সুযোগের অভাব। শেখ হাসিনাকে ভারতে অবস্থান করার সময়ই অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে, যদিও তার প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন এখনও প্রক্রিয়াধীন। তাকে অভিযোগের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়নি, এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা হুমকি ও হামলার কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ বা পরামর্শ হয়নি।

তৃতীয়ত, মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। প্রক্রিয়াগত ত্রুটিপূর্ণ এই বিচার যদি মৃত্যুদণ্ডে সমাপ্ত হয়, তাহলে তা কার্যত বিচারবহির্ভূত হত্যার সমতুল্য হবে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে বেঁচে থাকার অধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×