কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে মাঠে ফেরাতে বিদেশি চাপ বাড়ছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ সম্প্রতি জানিয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন এবং সেখানে বলেছেন যে আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, কারণ তাদের কোনো নিবন্ধন নেই এবং দলের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, “ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বিষয়টি নোট করতে পারেন, তবে এর মানে এই নয় যে তারা ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।”
শনিবার (১৫ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের রিপোর্টে জুলাই আন্দোলনে ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার তথ্য রয়েছে। তবে সেখানে অপরাধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দল আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নামে বিচার নয়, অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার গ্রহণযোগ্য। একটি রাজনৈতিক দলকে অপরাধী ঘোষণা করা মানে তার রাজনৈতিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, যা জাতিসংঘ সমর্থন করে না।”
ফিরোজ আরও বলেন, “ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে দিল্লি যাচ্ছেন খলিলুর রহমান। ভারতের উদ্বেগ হলো, বাংলাদেশে নির্বাচন না হলে দেশ অস্থিতিশীল হবে এবং সেই অস্থিরতার সুযোগ নেবে পাকিস্তান বা চীন। উত্তর-পূর্বের ‘চিকেন নেক’ এলাকায় ভারতের তিনটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এ উদ্বেগের প্রতিফলন।”
তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যদিও ভারত ড. ইউনূসের সঙ্গে কিছুটা অসন্তুষ্ট, তাদের ধারণা, বিএনপি বা জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতও কঠোর অবস্থান নেবে না এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মতো আচরণ করবে না। ভারতের মতে, বর্তমান অনিশ্চয়তার তুলনায় যেকোনো নির্বাচিত সরকারই বেশি স্থিতিশীল অংশীদার হবে।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “ভারত একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও খোলা রাখতে চায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিকভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং ভারতও সক্রিয় রয়েছে।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, “ড. ইউনূস শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নন, তিনি নোবেলজয়ী। এই পরিচয় তাকে বিশ্বনেতাদের কাছে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়। তার অবস্থান ও উদ্যোগে যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সামনে আসে এবং তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এতে ব্রিটিশ সরকার ও লেবার পার্টি বড় ধাক্কা খায়। ফলে ধারণা তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউনূসের প্রতি আগের সমর্থন থেকে দূরে সরে গেছেন। আগে যারা ব্রিটিশ কূটনীতিক বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিতেন, তারা এখন নীরব। কারণ যুক্তরাজ্যের চাপ পশ্চিমা বিশ্বকে একই পথে ঠেলে দিতে পারে।”
ফিরোজ বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, বিষয়টি সরল নয়। নির্বাচন তফসিলের আগে-পরে পশ্চিমাদের অবস্থান পরিষ্কার হবে। যদি ‘বিচারাধীন’ হওয়ার যুক্তিতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়, পশ্চিমাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এখন বৈশ্বিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমারা সাধারণত সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে যেখানে জবাবদিহি ও গণতন্ত্র আছে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব দেশে সরকার ও জবাবদিহি অনুপস্থিত, পশ্চিমারা সাধারণত সেই দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে না। বাংলাদেশকে এগোতে হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রয়োজন। আর ড. ইউনূসের গণতান্ত্রিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধরে রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে ঘিরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।”
ফিরোজ বলেন, “বিচার করতে বাধা নেই, মৃত্যুদণ্ডও আইনি প্রক্রিয়ায় হতে পারে। কিন্তু একটি দলকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ভিন্ন বিষয়। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা বড় প্রশ্ন।”
তিনি যোগ করেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে সংকট রয়ে গেছে। তাই একটি রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে হবে।”