হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া চলছে: প্রসিকিউটর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:২৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিষয়ে ইন্টারপোলকে অবহিত করার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রসিকিউটর তামিম জানান, রায় চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে আপিল বিভাগে আবেদন করতে হবে। তিনি বলেন, তা না হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলকে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের তথ্য পাঠানো হবে।
এর ঠিক আগের দিন, সোমবার ১৭ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। রায়ে আদালত জানায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এবং কামালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় সহযোগিতামূলক সাক্ষ্য দেয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ১ এ রায় ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার এটি প্রথম রায়।
সোমবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। টানা ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট রায় পাঠের পর দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। এরপর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রথমে মামলায় একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একাধিক সময়সীমা বৃদ্ধির পর ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এরপর ১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগসহ আনুষ্ঠানিক চার্জ দাখিল করা হয়।
অভিযোগগুলোতে উল্লেখ ছিল গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা। ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগগুলো গঠনের আদেশ দেয়।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক। সাবেক আইজিপি মামুনই এ মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি। অভিযোগ গঠনের দিন তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। গত ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন যুক্তিতর্কে তাদের খালাস চান। রাজসাক্ষী মামুনের পক্ষ থেকেও তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ খালাস আবেদন করেন।