চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিটি জায়গায় চাঁদাবাজি, প্রতিদিন ওঠে দুই-আড়াই কোটি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০২:১৪ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিটি স্তরে চাঁদাবাজি চলে—এমন কঠোর অভিযোগ তুলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তার দাবি, বন্দরে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন। মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য ও অগ্রগতি তুলে ধরতেই এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে রিট আবেদনের ওপর হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা নতুন বেঞ্চে যাবেন অথবা প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হবেন।”
রায় নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমি রায়ের বিরুদ্ধে যাচ্ছি না, রায়ের কথাও বলছি না। দুনিয়াতে যাদের যাদের ট্রিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে, এ পর্যন্ত বন্দরে সবচেয়ে বেশি ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে।”
পানগাঁও বন্দরের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সরকার প্রতিবছর ২২ কোটি টাকা লস দিচ্ছে। এখন আপনি লাভ পাবেন।”
বন্দরে দীর্ঘদিনের অবৈধ লেনদেনের চিত্র উল্লেখ করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। “প্রত্যেকটি জায়গায় চাঁদাবাজি। ভেতরে ট্রাক দাঁড়ানো, দিনের পর দিন দাঁড়ানো—যেটা জায়গা না, কেউ না কেউ চাঁদা নিচ্ছে। ভেতর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে গেছে, সেখানেও চাঁদা নেওয়া হচ্ছে,” বলেন উপদেষ্টা।
চট্টগ্রামের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আচরণের সমালোচনাও করেন তিনি। “অতীতে যিনি চট্টগ্রামের মেয়র হন, তিনি মেয়র কম—বন্দরের রক্ষক বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরটা সোনার ডিম পাড়া মুরগির মতো। তাড়াতাড়ি জবাই করো, সব বের করে খেয়ে ফেলো,” মন্তব্য করেন তিনি।
বন্দর পরিচালনার উন্নতির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথমে বলল যে অমুক চলে গেলে বন্দর অনেক ডাউন হয়ে যাবে। আমি নিজে ভয় পেয়ে গেলাম। পরে মিটিং করে বললাম ঠিক আছে ৫ শতাংশ কম হোক, সেটাও রাজি। এখন তো ফাস্ট—যেখানে দিনের পর দিন লাগত, সেখানে একদিন, দেড় দিন বা তারও কম সময় লাগছে।”
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে যাঁদের দেখা হয়, ১০০% বলছে স্যার, যদি একটা ভালো কাজ করেন তাহলে এটা করেছেন। এটা তো আগের পরিকল্পনা, হঠাৎ করে আসেনি।”
প্রতিদিন কত টাকা অবৈধভাবে ওঠে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। প্রত্যেকটা দিন। বন্দরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তারা বেশি বলবে।”
এই অর্থ আদায় বন্ধ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “অনেক কমেছে।” পুরোটা বন্ধ করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “বাংলাদেশে পুরোটা কমানো সম্ভব?”
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনা নিয়ে রিট আবেদনের ওপর গত ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করেন, আর বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রিট আবেদন খারিজ করে দেন।