আগে জুলাই সনদ, পরে নির্বাচন: জামায়াত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৪৩ এম, ১৪ আগস্ট ২০২৫
নির্বাচনের আগে আইনি স্বীকৃতিসহ "জুলাই সনদ" বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর রাস্তায় নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের যৌথ আয়োজনে বিকেল ৫টার দিকে বিজয়নগরের পানির ট্যাংকি এলাকায় ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে, মঞ্চ নির্মাণের কারণে দুপুর ৩টা থেকেই বিজয়নগর মোড় থেকে পল্টনগামী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর উল্টো দিকেও যান চলাচল বন্ধ থাকায় রাজধানীর ওই এলাকায় ভয়াবহ যানজট দেখা দেয়। অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সাধারণ মানুষকে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে কাকরাইল পর্যন্ত অগ্রসর হলে ভোগান্তি আরও বাড়ে।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, "আগে জুলাই সনদ, পরে নির্বাচন হবে। নির্বাচন ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে হবে। ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর চায়। জামায়াত ইলেকশন চায়, সিলেকশন নয়।"
তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই সনদ নিয়ে সব দলের মধ্যে মতৈক্য থাকলেও একটি দল এখন এর আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। "অধিকাংশ দলই জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে মত, ভিন্নমত ও নোট দিয়েছেন। সব কিছুর বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পরও একটি দল বলছে, এর আইনি ভিত্তি নেই। তাহলে কী এ ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি আছে? সরকার তো মুখে স্বীকার করছে। কিন্তু সে অনুযায়ী যদি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে ইমান থাকে?" — বলেন ডা. তাহের।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে গঠিত জুলাই সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংস্কারের স্পষ্ট রূপরেখা দেওয়া রয়েছে। তবে জামায়াতের মতে, সংস্কার কার্যকর হতে হবে ফেব্রুয়ারির আসন্ন নির্বাচনের আগেই—নির্বাচনের পরে নয়।
"ইলেকশন চাই, সিলেকশন নয়। ডিজাইনের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের ভোটাধিকার আবার হরণের পাঁয়তারা চলছে। যদি বিদেশি ডিজাইনে সাজানো নির্বাচন হয়, তাহলে মানুষ জীবন ও রক্ত দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে," — হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "একটি দল বাদে কেউ শর্তহীনভাবে জুলাই ঘোষণাকে গ্রহণ করেনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার জরুরি। মাসের পর মাস আলোচনা করে সংস্কারে ঐকমত্য হওয়ার পর তারা বলছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নেই। আইনি ভিত্তি যদি না থাকে, তাহলে সংস্কার কী হয়েছে?"
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের এই নেতা প্রশ্ন তোলেন, "পরিষ্কার করে বলছি– যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, তার আলোকেই আইনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হতে হবে। আমাদের বন্ধুরা বলেন, সংস্কার তারা সংসদে গিয়ে করবেন। আপনারা যদি সংসদে গিয়েই করেন, এখন সমস্যা কোথায়?"
২৫ বছরের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করেই তিনি বলেন, "অনেকে বলেন, পিআর বুঝি না। জরিপে এসেছে ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর চায়। মানে জনগণ পিআর বোঝে। আর আপনি বুঝেও বোঝেন না! জামায়াত গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই গ্রহণ করতে হবে।"
দেশে আরেকটি রাজনৈতিক সংকট এড়াতে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবেন না, জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না। আসুন অবাধ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ তৈরি করি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন, সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দিন। সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দিতে মাত্র এক সপ্তাহ লাগবে।"
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম এবং উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।