রিকশাচালক আজিজুরের মাঝে আশার আলো দেখছেন পলক


রিকশাচালক আজিজুরের মাঝে আশার আলো দেখছেন পলক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপিকর্মীদের মারধরের শিকার রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে দেখে আশার আলো দেখছেন কারাবন্দি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

ডজনখানেক মামলার আসামি পলক বলেন, “এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। যার প্রমাণ আজিজুর রহমান।”

গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে ‘জুলাই আন্দোলন’-এর সময় ট্রাকচালক হোসেন নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বুধবার পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের সামনে তিনি জোরে জোরে এই মন্তব্য করেন।

মোহাম্মদপুর থানার এসআই আক্তারুজ্জামান এ মামলায় পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত বুধবার শুনানির দিন ধার্য করে। এ অনুযায়ী তাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

পলককে মাথায় হেলমেট, হাতে হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খোলার পর দেখা যায়, তার কোমরে রয়েছে লাম্বার সাপোর্ট বেল্ট।

শুনানি শুরুর আগে এজলাসে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি এবং অনেককে সালাম দেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমান সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে বসেন এবং শুনানি শুরু হয়।

শুনানির সময় পলক বিচারকের কাছে জানতে চান, তিনি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কিনা। বিচারক জানান, তিনি “সন্দেহভাজন”। জবাবে পলক বলেন, “ওহ সন্ধিগ্ধ।”

তিনি এরপর ঘটনাটির তারিখ জানতে চাইলে জানানো হয়, এটি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের ঘটনা। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, “গত বছর ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে ট্রাক ড্রাইভার হোসেন নিহত হন। আসামি জুনাইদ আহমেদ পলক জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করছি।”

এ সময় পলক বলেন, “উনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কি ৩ জুলাইয়ের কথা বললেন?” পরে তাকে জানানো হয়, এটি ৩ জুলাই নয়, ১৯ জুলাইয়ের ঘটনা।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিতে নিহত হন ট্রাকচালক হোসেন। তার মা রিনা বেগম ৩১ আগস্ট এই মামলা দায়ের করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন আদালতে বলেন, “এটা একটা হত্যা মামলা। তদন্তে নাম আসায় তাকে (পলককে) গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের ওপর ক্রাকডাউন চালানো হয়। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের গণকবরে সমাহিত করা হয়। হত্যার সাথে পলক সরাসরি সম্পৃক্ত।”

শুনানি শেষে বিচারক পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ফেরার সময়ও তিনি বলেন, “এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। যার প্রমাণ আজিজুর রহমান।”

গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে যান রিকশাচালক আজিজুর রহমান। বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলের তোড়া হাতে সেখানে পৌঁছান। তার তোড়ায় লেখা ছিল, ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’।

তাকে দেখেই বিএনপিকর্মীরা আক্রমণ করেন। একজন তার হাত থেকে ফুলের তোড়া কেড়ে নেন। এরপর চলে মারধর ও রিকশা ভাঙচুর। কান্নায় ভেঙে পড়েন আজিজুর।

তিনি বলেন, তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন, চারশ টাকা দিয়ে তোড়া কিনেছেন। “আমার অনেক কষ্টের টাকা, আমি দুই বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালাই। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি জন্যি এহানে আইছি।”

পরে পুলিশ তাকে আটক করে এবং এক বছর আগের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে তোলে। আদালত পরদিন তাকে জামিন দেয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×