আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডে রাজসাক্ষীর ক্ষমা প্রার্থনা ট্রাইব্যুনালে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:৩৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
আশুলিয়ায় গত বছরের ৫ আগস্ট ছয় তরুণকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাজসাক্ষী শেখ আবজালুল হক।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) জবানবন্দি শেষে তিনি এই অনুতাপ প্রকাশ করেন।
এদিন আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যা করার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন আবজালুল। ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি ৫ আগস্টের পুরো ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। যদিও মরদেহ পোড়ানোর সময় সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না, তবে ১৫ আগস্ট নিজের ইস্যুকৃত অস্ত্র জমা দিতে গিয়ে আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ ছয়টি লাশ পেট্রোল ঢেলে পোড়ানোর কথা তাকে জানান। জবানবন্দি শেষে আদালতের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। অভিযোগ গঠনের সময় হাজির থাকা আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক এবং রাজসাক্ষী হিসেবে যা জানেন সব আদালতে বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তার দোষ স্বীকারের অংশ রেকর্ড করা হয় এবং লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে অনুমতি দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারিত থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে তা হয়নি, যদিও আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। একই কারণে ১২ নভেম্বরও প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এদিন সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়।
২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ৫ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব আদালতে সাক্ষ্য দেন। তার সামনেই একজন গুলিতে নিহত হন এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে পুলিশের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে জানান তিনি। পরে তাকে জেরা করে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
এর আগে ৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার বিবরণ দেন এবং ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মম ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন। ২৯ অক্টোবর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেন এসআই মো. আশরাফুল হাসান, যিনি ওসির নির্দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দিয়েছিলেন।
১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। তার আগের দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে গত বছরের ৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউশন গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৬২ সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ জানানোর জন্য সংযুক্ত করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।
এই মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। অপরদিকে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আরও আটজন এখনো পলাতক।
গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্যানে একজন জীবিত থাকলেও তাকেও পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়।