অবৈধ বিদেশ সফর, ব্যাংক প্রশাসন নীরব


অবৈধ বিদেশ সফর, ব্যাংক প্রশাসন নীরব

গোপনে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সিস্টেম এনালিস্ট পদে ৫ম গ্রেডে কর্মরত আছেন এই কর্মকর্তা। সরকারি আদেশ মোতাবেক একজন সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের জন্য বেশ কয়েকটি বিধি-বিধান মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মন্ত্রিসভা বিভাগের জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কারণের আওতায় চিকিৎসা, পারিবারিক আত্মীয়-সজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে সাক্ষাৎ, ধর্মীয় কারণ বা তীর্থস্থান পরিদর্শনের জন্য বিদেশ সফর করতে পারেন। তবে বিদেশ ভ্রমণের কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানের প্রত্যয়নসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে সরকারি আদেশ (জিও) গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে সরকারি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে, কোন প্রকার অনুমতি গ্রহণ ছাড়া সম্পূর্ণ গোপনে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এই কর্মকর্তার। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আগস্ট ২০২৪ এর পূর্বে ব্যাংকের সাবেক দুর্নীতিবাজ এমডি শেখ মোঃ জামিনুর রহমানের সহযোগিতায় একচ্ছত্রভাবে ব্যাংকে প্রভাব খাটিয়ে তিনি পাহাড়সম দুর্নীতি করেছেন।

গোপনসূত্রে জানা যায়, E00141674 নম্বরধারী পাসপোর্ট ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর হতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কানাডা, ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত, ০৫ এপ্রিল হতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত থাইল্যান্ড এবং ১৩ জুন হতে ২৩ জুন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত, মোট ৪ (চার) বার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমতি ছাড়া সম্পূর্ণ গোপনে ও অবৈধভাবে বিদেশ সফর করেছেন আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার। ৫ম গ্রেডের একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ৯ মাসের মধ্যে ৪ বার গোপনে বিদেশ ভ্রমণ সন্দেহজনক ইঙ্গিত বহন করে। তার জীবনযাত্রার মান আয়ের উৎসের সাথে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গুঞ্জন রয়েছে যে, ব্যাংকে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে অর্জিত শত শত কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার নিশ্চিত করতে তিনি গোপনে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

আরও জানা যায়, আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহারের এই গুরুতর অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উক্ত দিনগুলোতে ব্যাংকে তার অননুমোদিত অনুপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এবং দায়েরকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃক পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে উল্লিখিত পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণের সত্যতাও যাচাই করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গোপনে ও অবৈধভাবে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগটির সত্যতা যাচাই-এর পরেও অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃক অদ্যাবিধ কোন প্রকার বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

১৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে ব্যাংকে প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও মারামারির ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃক সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহারকে আইসিটি বিভাগে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কর্মী ব্যবস্থাপনা বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহারের অবৈধভাবে ও গোপনে বিদেশ সফরের স্পষ্ট ও সত্য অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহীসহ একাধিক কর্মকর্তার নিকট ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েও, কর্তৃপক্ষ একবারে নির্বিকার। ব্যাংকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন অনীহা ব্যাংকটিকে ক্রমশ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহা দাবি করেছেন যে তার বৈধ জিও রয়েছে এবং তিনি বৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। তবে যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, তার ব্যক্তিগত ফাইলে বিদেশ ভ্রমণের কোনো অনুমোদন বা জিও সংরক্ষিত নেই। 

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×