ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদ
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৫:১৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২০ জুলাই) বিকেল ৪টায় টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন: "কমিশন না সার্বভৌমত্ব? সার্বভৌমত্ব, সার্বভৌমত্ব", "গাজায় যখন মানুষ মরে, মানবাধিকার কি করে?", "মানবাধিকার কমিশন, মানি না মানবো না", ও "শ্রীলঙ্কা যখন মানেনি, বাংলাদেশও মানবে না"—এসব স্লোগানের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
বক্তারা দাবি করেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং তা শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা বলেন, এই উদ্যোগ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি।
সরকারের উদ্দেশে তারা বলেন, অবিলম্বে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ঢাবি শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, আমার যে জুলাই অভ্যুত্থান করেছিলাম তার মূল মোটিভেশন ছিল হাসিনার স্বৈরাচার শাসন। তার বিভিন্ন সংস্থা , এজেন্সির মাধ্যমে শাসন করেছিল । আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদী শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো আধিপত্য কায়েম করার জন্য বিভিন্ন দেশে তাদের সংস্থা স্থাপন করে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা স্থাপন করার মাধ্যমে তারাও এই আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে। তাই আমার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এই চুক্তি বাতিল করার জন্য।
অপর এক শিক্ষার্থী জিয়াউল হক ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মিশন চালুর বিরোধিতা করার ৪ টি কারণ উল্লেখ করেন ।কারণগুলো হলো-
১. সার্বভৌমত্বগত সমস্যা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দেশের অভ্যন্তরীণ নানান বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের স্বকীয়তা থাকবে না। মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হবে। পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পরিবর্তন তথা পরিকল্পিত ইহুদীবাদী খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন তরান্বিত হবে।
২. মূল্যবোধগত সমস্যা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এলজিবিটিকিউ (সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার ইত্যাদি) এবং পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। যা বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাসেও তারা এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে। যার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা খুবই উদ্বিগ্ন।
৩. আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ
যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে সেসব দেশের অন্তর্জাতিক স্ট্যাটাস অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশে এই অফিস স্থাপিত হওয়ায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে! সাধারণত যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও চরম অস্থিতিশীল দেশগুলোতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশ ওরকম কোনো অবস্থায় নেই।
৪. মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হ্রাস
ধর্ষক কিংবা খুনি যাদের শাস্তি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এসব অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থেকে সরকারের উপর চাপ আসবে। ফলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে এবং ফরিয়াদিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।