ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে একলাফে ভিসার ফি ১ লাখ ডলার, উদ্বেগে সিলিকন ভ্যালি


ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে একলাফে ভিসার ফি ১ লাখ ডলার, উদ্বেগে সিলিকন ভ্যালি

হোয়াইট হাউস থেকে শুক্রবার জানানো হয়, একটি নতুন নির্বাহী আদেশের আওতায় এইচ-১বি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে শুধু ফি বাড়ানোই নয়, নতুন কিছু নিয়ম-কানুনও যোগ করা হয়েছে। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, এইচ-১বি কর্মসূচির অপব্যবহার রোধ এবং স্থানীয় মার্কিন নাগরিকদের কর্মসংস্থান সুরক্ষার লক্ষ্যেই এসব পদক্ষেপ।

পূর্বে যেখানে এইচ-১বি ভিসার নিবন্ধন ফি ছিল ২১৫ ডলার, সেখানে এখন নিয়োগদাতাদের প্রতি আবেদনপত্রে গুনতে হবে ১ লাখ মার্কিন ডলার।

এইচ-১বি ভিসা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে প্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও অঙ্কশাস্ত্রসহ নানা কারিগরি খাতে বিদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগের সুযোগ দেয়। প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার নতুন ভিসা ইস্যু করা হয়, যার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ২০ হাজার কোটা, যা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া বিদেশিদের জন্য বরাদ্দ। সাধারণত ভিসাটির মেয়াদ তিন বছর, তবে তা নবায়ন বা গ্রিনকার্ডে রূপান্তরের সুযোগ থাকে।

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরতদের মধ্যে এইচ-১বি ভিসাধারীর সংখ্যা ছিল ৩২ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ৬৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই পরিস্থিতি মার্কিন কর্মীদের জন্য একটি বড় হুমকি।

এই প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি খাতের অনেকেই সিদ্ধান্তটিকে ‘পেছনের দিকে ধাক্কা’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই সিলিকন ভ্যালির বড় বড় কোম্পানি ও উদ্যোক্তাদের সাফল্যের পেছনে এইচ-১বি ভিসার বড় অবদান রয়েছে।

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এক সময় এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ শুরু করেন। তিনি গত ডিসেম্বরে নিজের প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ লিখেছিলেন, “আমার মতো স্পেসএক্স ও টেসলা গড়তে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তাদের অনেকেই এইচ-১বি ভিসার কারণে সুযোগ পেয়েছেন। এই প্রোগ্রামই আমেরিকাকে শক্তিশালী করেছে।”

ইনস্টাগ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক ক্রিগারও প্রথমদিকে এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন।

ন্যাশনাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যাসোসিয়েশন (এনভিসিএ) জানিয়েছে, বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য এইচ-১বি ভিসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ। যদিও সরাসরি উদ্যোক্তা হওয়ার অনুমতি এই ভিসায় নেই, তবুও এটি পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং যোগাযোগ তৈরি করার জন্য কার্যকর একটি মাধ্যম।

তবে এই হঠাৎ পরিবর্তনে প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের আশঙ্কা, অধিক ফি এবং কঠোর নিয়মের ফলে অনেক প্রতিভাবান বিদেশি পেশাজীবী যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে কানাডা বা ইউরোপের মতো তুলনামূলক উদার অভিবাসননীতির দেশগুলোতে চলে যেতে পারেন।

হোয়াইট হাউস অবশ্য বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অংশ হিসেবেই’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, শ্রম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একটি নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে, যাতে বিদেশি কর্মীরা মার্কিন নাগরিকদের তুলনায় কম পারিশ্রমিকে কাজ না করেন।

এইচ-১বি নিয়ে নতুন এই উদ্যোগ নির্বাচনী বছরের একটি বড় নীতিগত অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে অভিবাসন নীতিকে সামনে রেখেই ট্রাম্প তার অবস্থান আরও দৃঢ় করছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×