সেচ্ছায় ছাত্রদলের ৯ নেতার পদত্যাগ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:১৭ পিএম, ১২ জুলাই ২০২৫
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পাশে ব্যবসায়ী চাঁদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও কংক্রিটের টুকরো দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সংগঠনজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই, তবে ১১ জুলাই রাতে সেই ঘটনার ভয়াবহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, সোহাগকে কুপিয়ে ফেলার পর পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় এবং মৃতদেহের উপর লাফিয়ে বর্বর আচরণ করা হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। সেই সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধেও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়, যার অংশ হিসেবে অন্তত ৯ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখার ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ আবু সায়ীদ পদত্যাগ করে বলেন, দলে গণতন্ত্র নেই, নিয়মিত কাউন্সিল হয় না, নেতৃত্ব নির্ধারণ হয় পারিবারিক প্রভাবের মাধ্যমে। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, “বাংলাদেশের মাটির চেয়ে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না। এ দেশে শান্তি ফিরে আসুক—সেই কামনা করেই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি।”
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিসানুল আলম লিসান বলেন, “দীর্ঘ এক দশক ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আজ ব্যক্তিগত কারণেই সরে যাচ্ছি। সত্যিকার পরিবর্তনের দিন এলে আমি আবার সামনে এসে দাঁড়াব।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত বলেন, “নেতাকর্মীদের অনৈতিক কাজের কারণে আমি মানসিকভাবে বিরূপ অবস্থায় আছি। সংগঠনের অভ্যন্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আমি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য রাকিবুল হাসান রানা বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা আজ ভেঙে গেছে। এই বাস্তবতায় আমি হতাশ ও বিপর্যস্ত। তাই পদত্যাগ করছি।”
সরকারি বাঙলা কলেজের ছাত্রদল নেতা রাসেল মিয়া বলেন, “নিজের পরিশ্রমের মূল্য নিজে পেতে চাই। কিছু সুবিধাভোগী নেতার কারণে পরিবার পর্যন্ত আমাকে দোষারোপ করছে। তাই নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদল থেকে সরিয়ে নিচ্ছি।”
এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদল সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান, সিলেটের চুনারুঘাট ছাত্রদলের ৯ নম্বর রানীগাঁও শাখার সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম ইমরুল
এই সকল পদত্যাগে স্পষ্ট হয়েছে যে, সংগঠনের ভেতর থেকেই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও দুর্বৃত্তায়নের প্রতিবাদে ছাত্রনেতারা সোচ্চার হচ্ছেন। অনেকে সংগঠন পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নৈতিক নেতৃত্বের অভাবকেই দায়ী করছেন।
সোহাগ হত্যাকাণ্ড এবং ছাত্রদলের কিছু সদস্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের পর সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।