শুল্কের বিপরীতে কী দিতে হয়েছে সেটা না জেনে প্রভাব বলতে পারছি না: আমীর খসরু
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:২১ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের জন্য আপাতত স্বস্তিদায়ক মনে করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে এই সুবিধার পেছনে সরকার কী দিয়েছে বা কী ধরনের সমঝোতা হয়েছে, তা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এর প্রকৃত প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, আপাতত ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ অন্তত এই মুহূর্তে আমাদের রপ্তানি বাজার বাধাগ্রস্ত করবে না। এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না।... তবে এর বিপরীতে কী দিতে হয়েছে সেটা না জানা পর্যন্ত, এর প্রভাব কী হবে তা বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৯ শতাংশ, ভারতের ২৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান হার প্রতিযোগিতামূলক বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই শুল্ক হ্রাসের পেছনে যে শর্ত বা সমঝোতা থাকতে পারে, সেগুলো জানার পরই চূড়ান্তভাবে বিশ্লেষণ করা যাবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা শুধুমাত্র একটা শুল্কের বিষয় নয়। এর পেছনের আরো যে বিষয়গুলো জড়িত আছে সেগুলো সম্মিলিতভাবে বিবেচনায় আনতে হবে, বলেন তিনি।
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রীর মতে, যদিও রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, তবে পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।
সাংবাদিকরা জানতে চান, বাণিজ্য সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার বিষয়টি এই শুল্ক কমানোর সঙ্গে যুক্ত কিনা। জবাবে আমীর খসরু বলেন, কিছু তো করতেই হবে। কারণ আমেরিকানদের পুরো ট্যারিফের বিষয়টা হচ্ছে, তাদের পণ্য রপ্তানির স্বার্থে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মূলত তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসায়ীদের ওপর কতটা চাপ পড়বে, তা নির্ভর করবে তারা কীভাবে এই শর্তাবলি সামলাতে পারে তার ওপর।
আমীর খসরু মনে করেন, রপ্তানি বাজারে কেবল আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। সে জন্য প্রয়োজন বাজার বহুমুখীকরণ বা ডাইভারসিফিকেশন।
তার কথায়, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে টেকসই বাণিজ্যের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে, সাধারণ মানুষের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে এবং আইনি ও নীতিগত কাঠামোর সংস্কার ঘটিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় রকমের রূপান্তর আনতে হবে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক সরাসরি বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে না। বরং তা আদায় হবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে। তবে এতে খরচ বেড়ে যাবে আমেরিকান ক্রেতাদের, ফলে তারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ওপর দাম কমানোর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, অর্ডারের পরিমাণও কমে যেতে পারে যা রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে একই ধরনের শুল্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরও আরোপ হওয়ায়, মার্কিন আমদানিকারকরা সহজেই অন্য বিকল্পে সরে যেতে পারবেন না বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এতে করে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এখনও ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে।