কক্সবাজারে যাওয়া ছিল আমার নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত


কক্সবাজারে যাওয়া ছিল আমার নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, বিমানবন্দরে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির আওতায় এনে ভিডিও ও ছবি তোলা হয়েছে এবং সেগুলো কিছু সংবাদমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করেছে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই ভিডিওগুলোকে ক্রাইম সিনেমার আবহে উপস্থাপন করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দলের পাঠানো শোকজের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এর আগে কক্সবাজার সফর নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে এনসিপি পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। ৬ আগস্ট পাঠানো ওই নোটিশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সফরের কারণ জানতে চায় দল।

হাসনাত বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ প্রাণ দিয়েছিল এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে, যেখানে কেউ স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবে। সেই চেতনায় তৈরি হওয়া সরকারের উচিত ছিল একটি ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, যা সেই শহিদদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করবে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী, শহিদ পরিবার এবং আহতদের কেউই ওই ঘোষণাপত্র প্রণয়নে মতামতের সুযোগ পাননি। এমনকি তাদের অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেখানো হয়নি।

হাসনাতের ভাষ্যে, ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এমন কিছু ধারা রয়েছে যা অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। উদাহরণ দিয়ে বলেন, এতে উল্লেখ করা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে দেওয়া হবে— যা ‘ভুল’ ও মৌলিক পরিবর্তনের পথে অন্তরায়। তিনি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারেন, আন্দোলনে আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেককেই অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। “এটা শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, নৈতিক অবক্ষয়েরও বহিঃপ্রকাশ,” মন্তব্য করে তিনি জানান, ঐ অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তার নীরব প্রতিবাদ।

হাসনাত বলেন, ওই সময় বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল পূর্বের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ। এ বিষয়ে তিনি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পরে মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে বিষয়টি জানান। তিনিই আহ্বায়ককে অবহিত করে জানান যে, এতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এরপর হাসনাতের সঙ্গে যুক্ত হন সারজিস আলম ও তাসনিম জারা, খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি।

তিনি বলেন, “কিন্তু এরপর যা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও তুলে কিছু মিডিয়ার হাতে তুলে দেয়। সেখানে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকরভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার ‘যোগসাজশে’ তাদের কর্মকাণ্ডকে ‘অপরাধপ্রবণ’ রূপে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছিলেন, যেখানে তিনি তখন দেশে ছিলেনই না।

“রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানানোর এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য নয়,” বলেন হাসনাত। তিনি মনে করেন, এই ধরণের 'ডিমোনাইজেশন কৌশল' অতীতে যেমন বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছে, তেমনি এখনো চলছে।

সবচেয়ে লজ্জাজনক দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, তাসনিম জারাকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘নগ্ন, অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেইমিং’ চালানো হয়েছে। কিছু গণমাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, “এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করা।”

তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরপরও একজন নারীকে এমন নোংরা আক্রমণের শিকার হতে হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সবশেষে, তিনি বলেন, “পার্টির উচিত ছিল মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। কিন্তু দল শোকজের মাধ্যমে এমন ভাষায় আমাদের অভিযুক্ত করেছে, যা বরং ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×