গ্রামীণ নারীর হাতের ছোঁয়ায় গড়ে উঠছে দুর্গা প্রতিমা
- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:২০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভোরবেলার নিত্যকাজ সামলানোর পর গ্রামীণ নারীরা এবার খুঁজছেন নতুন চ্যালেঞ্জ মাটির ছোঁয়ায় তৈরি করা দুর্গা প্রতিমা। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন কুমোরপাড়া ও পালপাড়ার প্রতিমা কারখানাগুলোতে ঘরের নারীরা এখন কাঠামো গড়ছে, রঙ মেখে দিচ্ছে, শাড়ি আর অলংকারে সাজাচ্ছে দেবীমূর্তিকে। প্রতিদিনের সংসারিক কাজের মাঝেই এ কাজ তাদের নতুন অভিজ্ঞতা ও আনন্দ এনে দিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে পুরুষরাই প্রধান কারিগর হলেও এবার জেলায় প্রতিমার চাহিদা দ্বিগুণ হওয়ায় ঘরের নারী সদস্যরাও কাজে নেমেছেন। তারা কাঠামো বাঁধা থেকে শুরু করে রঙ, অলংকার, শাড়ি সব কাজ সামলাচ্ছেন।

রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রামের বেবী মালাকর জানালেন, এবার জেলায় গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ পূজা হচ্ছে। আগে সংসারের কাজ সামলেই প্রতিমার কাজে হাত দিতাম না। কিন্তু এবার এত চাপ, বাধ্য হয়ে সংসারের কাজ ফেলে স্বামীকে সাহায্য করছি।
শুধু গৃহবধূ নয়, কিশোরী মেয়েরাও শিখছে প্রতিমা শিল্প। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সপ্তমী মালাকর বলেন, এক সপ্তাহ ধরে স্কুলে যাইনি। বাবা একা এত কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গতবার সাতটা প্রতিমা বানালেও এবার অর্ডার এসেছে পনেরোটা। তাই আমিও মাটি গড়তে, কাঠামো বাঁধতে শিখছি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি বাজারের পূজা রানী আগে শুধুই প্রদীপ, ধূপকাঠি বা কলস বানাতেন। এবার তিনি নিজের হাতে প্রতিমার অলংকার, মুকুট ও রঙ করছেন। তিনি বলেন, ভিন্ন ধরনের আনন্দ লাগছে নিজের হাতে দেবীমূর্তি সাজাতে। নারীর কোমলতা প্রতিমার সাজে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বংশপরম্পরায় প্রতিমা শিল্পী কালিকান্ত পাল বলেন, সারা বছর মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করি। দুর্গাপূজার অর্ডার আসে, তখনই স্বস্তি মেলে। গতবার আটটা প্রতিমা বানালাম, এবার চৌদ্দটার অর্ডার এসেছে। একা সম্ভব নয়, ঘরের মেয়ে-বউরা সাহায্য না করলে এত কাজ শেষ হতো না।
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর মোট ৫১৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ৩২টি বেশি। সদর উপজেলায় ৫৫টি, রাজারহাটে ১৩১টি, উলিপুরে ১২৫টি, চিলমারীতে ২৪টি, নাগেশ্বরীতে ৬৯টি, ভূরুঙ্গামারীতে ২০টি, রৌমারীতে ৭টি, রাজিবপুরে ১টি, ফুলবাড়ীতে ৬৫টি এবং কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ২০টি মণ্ডপ।
মহালয়ার পর পুজোর প্রস্তুতি চরমে। মণ্ডপে ঢাকের সুর শুরু হওয়ার আগেই নারীর হাতে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রতিমা। তাদের শ্রম, ভালোবাসা ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার ছোঁয়ায় কুড়িগ্রামের প্রতিটি প্রতিমার ভাঁজে ভাঁজে লেখা আছে নতুন শিল্পের গল্প।