৪৮ লাখ টাকা দিয়েও আসলামকে ফেরাতে পারেনি পরিবার, লিবিয়ায় দুই বছর ধরে বন্দি


৪৮ লাখ টাকা দিয়েও আসলামকে ফেরাতে পারেনি পরিবার, লিবিয়ায় দুই বছর ধরে বন্দি
বাম পাশে আসলাম, ডান পাশে দালাল জামাল প্রামাণিক

ইতালিতে গিয়ে ভাগ্য ফেরানোর আশায় লিবিয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন মাদারীপুরের যুবক আসলাম। কিন্তু স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রা এখন তার পরিবারের কাছে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে বন্দি আছেন আসলাম। তাকে মুক্ত করতে গিয়ে পরিবার খুইয়েছে সর্বস্ব; তবু ঘরে ফিরেনি তাদের সন্তান।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের হুগলী গ্রামের দালাল জামাল প্রামাণিকের মাধ্যমে এই বিপদে পড়েন আসলাম। পরিবারের দাবি, জামালের কাছে পর্ব পর্বে মোট ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও, ছেলেকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। ছেলের খবর পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকা বাবা-মা এখন দালালের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আসলামের মা আসমা আক্তার সম্প্রতি জামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “জমি বিক্রি আর ধার করে ৪৮ লাখ টাকা দিয়েছি ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য। দালাল জামাল দুই বছর ধরে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় রেখে অমানুষিক নির্যাতন করছে। এখন আবার নতুন করে টাকা চাইছে, না দিলে ভয় দেখায়। সরকারের কাছে অনুরোধ, দালালের বিচার চাই এবং আমার ছেলেকে যেন জীবিত ফিরে পাই।”

আসলাম ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল হালিম চৌকিদারের ছেলে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়। জীবিকার তাগিদে দিনমজুরির কাজ করতেন তিনি। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি জামালের সহায়তায় লিবিয়ায় পৌঁছান আসলাম। এরপর থেকেই শুরু হয় তার নির্যাতনের জীবন। মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জামাল আসলামের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে তুলে দেওয়া হয় মানবপাচারকারীদের হাতে, যারা পরবর্তীতে মুক্তিপণের দাবিতে ধাপে ধাপে ৪৮ লাখ টাকা আদায় করে।

অভিযোগ রয়েছে, এই টাকা জোগাড় করতে আসলামের পরিবার জমি বিক্রি ও চড়া সুদে ধার করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন পাওনাদারদের চাপ আর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। এত টাকা দেওয়ার পরও জামাল আরও অর্থ দাবি করলে বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন আসলামের মা।

গতকাল জামালের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সে বাসায় নেই এবং ঘরে তালা ঝুলছে। পরিবারের অভিযোগ, জামাল পালিয়ে গেছে। সাংবাদিকরা জামাল প্রামাণিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো টাকা নেই নাই, টাকা নিয়েছে মামুন নামের এক ছেলে, তার বাড়ি আলগী গ্রামে।” তবে তিনি দাবি করেন, “পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।” এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জাহাঙ্গীর আলম জানান, “এই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, আমরা তদন্ত করছি। এখন পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”

আসলামের পরিবার এখন সরকারের সহযোগিতা চায়। তাদের একটাই অনুরোধ; বিচারের আওতায় আনতে হবে দালালকে এবং যে করেই হোক, সন্তানকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×