তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:৫২ এম, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সর্বোচ্চ আদালত ২০ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ক আপিলের রায় ঘোষণা করবে। এটি সেই মামলার আপিল, যেখানে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সাতজনের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার রায়ের জন্য এই দিন নির্ধারণ করেছে।
এর আগে হাই কোর্টের রায়ের কারণে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার পথ খুলে গেছে। আপিল বিভাগের রায়ে এখন স্পষ্ট হবে, এই ব্যবস্থা সত্যিই ফিরবে কি না এবং ফিরলে কখন ও কীভাবে তা কার্যকর হবে।
ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ আপিল অনুমোদন দেয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর চাপে তৎকালীন বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে ১৯৯৮ সালে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন এম সলিম উল্লাহ ও আরও দুইজন আইনজীবী।
বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ অগাস্ট সেই রিট খারিজ হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ থাকলেও, ২০০৫ সালে রিটকারীরা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০০৬ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনকালে এ ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিলকারী ও রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে অংশ নেন আটজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। এছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এ ব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
২০১১ সালের ১০ মে সাতজনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেন। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এ বি এম খায়রুল হক। তবে রায় প্রকাশের আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীসহ ৫৫টি সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন।
রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তনের পর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক রিভিউ আবেদন জমা পড়ে। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান একটি আবেদন করেন। ১৬ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রিভিউ আবেদন জমা দেন। এছাড়া নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনও আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন।
এই চারটি রিভিউ আবেদন একত্রে শুনানির পর আপিল বিভাগ নতুনভাবে রায়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করেন। এই রায়ের ফলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।