আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়: ১৩ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৩৮ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫
দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গভীর কাছ থেকে গুলি চালিয়ে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে, এমনই বর্ণনা দিয়েছেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৩ নাম্বার স্বাক্ষী হিসেবে তিনি নিজের জবানবন্দি রেকর্ডের সময় এ তথ্য জানায়।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিন সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চের সামনে জবানবন্দি দেন ইমরান (২৭)। বেঞ্চের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী; অন্য দুই সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
ইমরান কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স করেছেন এবং ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে রংপুরে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
ইমরান বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুর নগরীর চারতলা মোড় থেকে মিছিল নিয়ে মডার্ন মোড়ের দিকে রওনা দিলে লালবাগে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাধা দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখিয়ে তারা পিছু হটে গেলে স্লোগান চালিয়ে মিছিল এগোয়।
দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট পেরিয়ে এক নম্বর গেটের কাছে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়।
সতর্কবার্তা ছাড়াই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে এবং অতর্কিত হামলা চালায়—ফলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দুর্যোগ বাঁধে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন।
সাক্ষীর বর্ণনা অনুযায়ী, আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন; তখনই very close range‑এ তাকে গুলি করা হয়। প্রথম গুলিতে তিনি পা পিছিয়ে পড়েন, পরে পুনরায় গুলিবিদ্ধ হন। সড়কের ডিভাইডার পার হয়ে একটু পেছনে চলে আসার চেষ্টা করলেও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান।
ইমরান আরও বলেন, গুলিবর্ষণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং আশপাশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নানা স্তরের নেতাকর্মী আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখানে কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি, বরং কিছু শিক্ষক-অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রাথমিকভাবে ইমরান যাদের নাম উল্লেখ করেন, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের পোমেল বড়ুয়া, মাহফুজ, আরিফ, বাবুল, টগর, ফজলে রাব্বী, আক্তার, আকাশ, মাসুদ রানা, সেজান মাহমুদ এবং কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
সাক্ষীর মতে, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, ডিসি (ক্রাইম) আবু মারুফ, এডিসি (ডিবি) শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, এসি আরিফ, তাজহাট থানার ওসি রবিউল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আবু সাঈদ মারা গেছেন; এ কারণে তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ইমরানকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামি পক্ষের নিয়োগপ্রাপ্ত চার জন আইনজীবী এবং উপস্থিত ছয় আসামির আইনজীবীরা। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুর ইসলাম, মঈনুল করিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়াম। তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম এখনও চলমান।