আবু সাঈদ হত্যা: সাবেক ভিসিসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আজ ১৪তম দিনের সাক্ষ্য
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৩৫ এম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ ১৪তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সময়, এবং মামলার আসামি হিসেবে সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ মোট ৩০ জন রয়েছে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আজ নতুন একজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হবে। তবে ১৬ নম্বর সাক্ষী, পুলিশ নায়েক আবু বকর সিদ্দিকের জেরার কাজ এখনও শেষ হয়নি। গত ১৩ নভেম্বর তিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে গত বছরের ১৬ জুলাই ঘটনার আগে ও পরে ঘটনাবলী বর্ণনা করেছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জেরার পর জবানবন্দি গ্রহণ করবেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা।
এর আগে ১২ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১১ নভেম্বর জবানবন্দি দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ, যিনি হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনিও হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। মামলায় সাক্ষী না উপস্থিত হওয়ায় পূর্বে ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর তিনবার সময় স্থগিত করা হয়েছিল।
নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ৬ অক্টোবর শেষ হয়। ওই দিন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক, এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল জবানবন্দি দেন। ২৮ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের মাধ্যমে। একই দিনে সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।
মামলার গ্রেপ্তার হওয়া ছয় আসামি হলেন এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। সাক্ষীরা তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য প্রদান করছেন।
মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায় সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে ২২ জুলাই সরকারি ব্যয়ে চারজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন চারজন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী, যার মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলামও শুনানিতে অংশ নেন। ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে পৃথকভাবে শুনানি হয়। শরিফুলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো, কনস্টেবল সুজনের পক্ষে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়। ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মামলায় মোট ৬২ জন সাক্ষী রয়েছেন।