গাজা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করল যুক্তরাষ্ট্র-মিশর-কাতার-তুরস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:২৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মিশরের শারম আল-শেখে সোমবার (১৩ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে যৌথভাবে স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত হয়েছে। এ ঘটনার ফলে দুই বছর ধরে হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলিদের জিম্মিদের মুক্তি প্রদান করা হয়েছে। খবর এএফপি।
ট্রাম্প চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটিকে “মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন” হিসেবে অভিহিত করেছেন। ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়।
ট্রাম্প ইসরায়েল সফরের সময় দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন। এরপর তিনি গাজার বিষয় নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশরে যান। সেখানে তিনি, মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ট্রাম্প বলেন, “এটি বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন। নথিতে নিয়ম-কানুন স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং এটি টিকে থাকবে।”
জিম্মি বিনিময় অনুযায়ী, হামাস গাজার ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ১,৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
ট্রাম্প ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বলেন, “৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত দেশটি যুদ্ধে ছিল। এই যুদ্ধের ভার কেবল গর্বিত জাতি ও বিশ্বস্ত জনগণই বহন করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলে শান্তির কোনো দিন আসেনি।”
জিম্মি মুক্তির খবর শোনার পর তেল আবিবে লোকজন উল্লাস, কান্না ও সমবেতভাবে গান করছিল। পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দিদের বহনকারী বাসগুলো পৌঁছালে জনতা তাদের স্বাগত জানাতে ভীড় জমায়। গাজার খান ইউনিসে মুক্তি পাওয়া বন্দিদের স্বজনরা উষ্ণ আলিঙ্গন ও আনন্দে অভিভূত হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে বন্দি মুক্তির সংবাদে স্বাগত জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাসের হাতে নিহত ২৭ জন জিম্মির মরদেহ এবং ২০১৪ সালের এক ইসরায়েলি সৈন্যের দেহও ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যেখানে ১,২১৯ জন নিহত হয়, অধিকাংশ বেসামরিক। এর আগে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতিতে ৪৭ জন ছাড়া সকল জিম্মি মুক্তি পেয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া ইউসুফ আফানা খান বলেন, “সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো আমার পুরো পরিবার আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছে। আমি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর একটি।”
এদিকে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে তার মধ্যস্থতা উদযাপন। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, ইসরায়েলের পূর্ণ প্রত্যাহার ও ধ্বংসকৃত অঞ্চলের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনার এখনও অনেক দিক বাকি।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, “ইসরায়েলের আচরণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুনরায় শুরু হবে না তা নিশ্চিত করতে হবে।”
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৬৭,৮৬৯ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ এই তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে, যেখানে নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।