আগামী জাতীয় নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের যাত্রার সূচনা: প্রধান উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১২:১৭ এম, ২২ নভেম্বর ২০২৫
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে “নতুন বাংলাদেশের যাত্রার সূচনা” হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সবাই মিলে একটি শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সশস্ত্র বাহিনী বরাবরই জনগণের পাশে থেকেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সংস্কার প্রক্রিয়াতেও বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, পেশাগত দক্ষতা, দেশপ্রেম ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনী এই ইতিবাচক ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
তিনি বলেন, শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সব সময় বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে যেকোনো বহিঃশত্রুর আগ্রাসন মোকাবিলায় বাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্য সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল বলে মন্তব্য করে ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে তিন বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-যুব সমাজকে জনকল্যাণ ও রাষ্ট্ররক্ষামূলক কাজে যুক্ত করতে বিএনসি’র কার্যক্রমও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে। ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত প্রতিরোধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করেছিলেন, বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হলে তাঁদের মৃত্যু অবধারিত ছিল এবং তাঁদের পরিবারের জীবনও হয়ে উঠত অসহনীয়। কিন্তু বীর সেনানীরা ব্যক্তিগত জীবন-ঝুঁকি উপেক্ষা করে দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এসময় তিনি ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ গঠনের ইতিহাস, ১১টি সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ এবং ২১ নভেম্বর তিন বাহিনীর যৌথ অভিযানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল, যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১০টি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। নারী শান্তিরক্ষী পাঠানোয় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা জরুরি। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের কল্যাণ ও শান্তি কামনা করেন এবং দেশের উন্নয়নযাত্রায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানা