জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান


জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘ঐতিহাসিক রায়’ হিসেবে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সরকারি বিবৃতিতে রায়টির গভীর তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করে জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়, রায় ঘোষণার পর কোথাও যেন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, উত্তেজনা, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে এ রায়কে কেন্দ্র করে আবেগ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়। তবে আবেগের বশবর্তী হয়ে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে- এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে বলা হয়।

সরকার আরও জানায়, জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা কেউ করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

দুপুর সাড়ে ১২টায় রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টিতে ছয়টি অংশ রয়েছে। জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীদের পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে নিহত কয়েকজনের পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল জানায়, তিন আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে এবং একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, “আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই মত দিচ্ছি যে, তাঁরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করে যে ঘৃণিত অপরাধ করেছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।”

এ মামলার আরেক আসামি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। সেদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন একমাত্র আসামি মামুন।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম কোনো মামলার রায়। এর আগে ১০ জুলাই সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি সহ পাঁচ ধরনের অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। একই ট্রাইব্যুনাল গত ২ জুলাই আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কঠোর দমনপন্থায় বহু মানুষ হতাহত হয়। তিন আসামির বিরুদ্ধে দেড় হাজারের বেশি মানুষ হত্যার উসকানি, নির্দেশনা ও ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’সহ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।

প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার অডিও টেপসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করে। গত ১ জুন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×