অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একটিও সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ নেই: প্রেস সচিব
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:৫৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে নানা সমালোচনার মধ্যেই এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম সরকারের শেষ ১৫ মাসের কার্যক্রমের অবদান নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার: নামেই শুধু সরকার, আসলে এক প্রকার এনজিও-গ্রাম!! অনেকের দৃষ্টিতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন - এতটাই দুর্বল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এরসঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি করতে আগ্রহী হয়নি!!”
শফিকুল আলম আরও উল্লেখ করেছেন, “এর নেতারা প্রায়ই ভীত বা অদক্ষ বলে মনে হয়; রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন ৫০০ দিনে ১,৭০০টির বেশি বিক্ষোভ হয়েছে!! তারা যেন নতুন ও অদক্ষ, আইন পাস করতেও হিমশিম খাচ্ছেন, প্রয়োগ তো দূরের কথা! অন্তর্বর্তী সরকার বারবার তুলনামূলক ছোট বা অখ্যাত গোষ্ঠীর চাপের সামনে নতি স্বীকার করেছে!!”
তিনি বলেন, অনেকেই এই সরকারের কার্যক্রমকে অযোগ্যতা ও অক্রিয়তার চোখে দেখে ব্যঙ্গ করে বলে, এটি এক “কিছু না করা, মাখন-খাওয়া দল” - যারা কাকতালীয়ভাবে ক্ষমতায় এসেছে, কিছুই করতে পারেনি, আর এখন অপমানজনক নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছে। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, “পেছনে তাকিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে বলি; এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।”
প্রেস সচিব পোস্টে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে -
১। শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা থামানো হয়েছে।
২। মার্কিন শুল্ক চুক্তি কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই সম্পন্ন হয়েছে।
৩। মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত।
৪। জুলাই ঘোষণা (July Declaration) একটি ঐতিহাসিক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং জুলাই চার্টার (July Charter) এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলেছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।
৫। সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অনেক কঠিন হবে।
৬। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে; যা বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ।
৭। নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এসেছে।
৮। অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে ও পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে।
৯। ব্যাংকিং খাতের লুটপাট রোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে - খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশে।
১০। আদালতের কার্যক্রম অনুযায়ী, অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের আবির্ভাব ঘটেছে। শেখ হাসিনাকে তার অবস্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে!!
১১। গুম বন্ধ হয়েছে। একসময় জাতীয় জীবনে আধিপত্যকারী বিএএল চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এসেছে; পূর্ববর্তী নির্যাতনের ওপর নির্মিত জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো এর প্রমাণ।
১২। র্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হয়, আর কোনো অনানুষ্ঠানিক মতবাদে নয়; গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে।
১৩। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১৪। গত ১৬ মাসে একটিও সাজানো “ক্রসফায়ার” ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
সবশেষে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘আমি আরও বলতে পারতাম। আমাদের ইতিহাসের এক আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস; বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত কিছু অর্জন করতে পারেনি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার এই পনেরো মাসে করেছে।