রাজশাহীতে ৪ লাশ উদ্ধার
ঋণগ্রস্ত মিনারুলের আত্মহত্যা, তাঁর চল্লিশার আয়োজনেও নেওয়া হলো ঋণ
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:১২ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঋণের বোঝা ও খাওয়ার অভাবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছিলেন মিনারুল ইসলাম। সেই মিনারুলের পরিবারের জন্য লাখ টাকা ঋণ করে চল্লিশা করেছেন তার বাবা রোস্তম আলী। তিনি জানিয়েছেন, ঋণের টাকায় ১২শ লোককে চল্লিশায় খাওয়ানো হয়েছে। ঋণ পরিশোধে জমি বিক্রি করবেন।
গত ১৫ আগস্ট স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে (৩) হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেন পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের মিনারুল ইসলাম (৩৫)। মরদেহের পাশে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’
শনিবার দুপুরে মিনারুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের চল্লিশা করা হয় আবারও ঋণ করে। বামনশিকড় গ্রামের বাড়িতে প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ১২শ’ লোককে খাওয়ানো হয়েছে। এতে অংশ নেন মিনারুলের স্বজন ও গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের জন্য রোস্তম আলীর বাড়িতে দুটি প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলে চেয়ার টেবিলে বসে তারা খাবার খান। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, ডাল ও মুড়িঘণ্ট।
রোস্তম আলী বলেন, আমাদের গ্রামে কেউ মারা গেলে ৪০তম দিনে চল্লিশা করা হয়। সমাজের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনরা এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে মৃতের আত্মার জন্য দোয়া করা হয়। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকেই এটা দেখে আসছি। মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।
তিনি আরও বলেন, আশপাশের মানুষজন বলেছিলেন, চারজনের মৃত্যু হওয়ায় বাড়ি ভারি ভারি লাগছে। ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম যেন ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। এ কারণে দুপুরে দোয়া হয়েছে। তারপর খাওয়া-দাওয়া।
রোস্তম আলী আরও বলেন, অনুষ্ঠান করতে ধার-দেনা হয়েছে। আমার তো জমানো টাকা নাই। ১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। বিক্রি করে ধার শোধ করব। তাছাড়া কোনো উপায় নাই।
পবার পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের নিয়ম নেই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করা হয়। এটা আমাদের এলাকার প্রাচীন রেওয়াজ।